৩ জুন, ২০২৩শনিবার

৩ জুন, ২০২৩শনিবার

নিউ মেক্সিকোতে ১৯৪৭ সালে সত্যিই কি এসেছিল ভিনগ্রহের প্রাণী! জেনে নিন আসল সত্যিটা

আমেরিকার প্রান্তিক অঞ্চল নিউ মেক্সিকো। নামটি শুনলেই মেক্সিকোর কোনো জায়গা মনে হলেও আসলে এটি আমেরিকার ৪৭তম অঙ্গরাজ্য। মূলত খামার এবং কৃষজমি অধ্যুষিত এলাকা এই নিউ মেক্সিকো।সময়টা ১৯৪৭ সালের জুন মাস। নিউ মেক্সিকোর রোজওয়েলে এক বিকেলে এমনই এক বিশাল খামারের মধ্য দিয়ে খামারের মালিক উইলিয়াম ব্রাজেল এবং তার ছেলে গাড়ি চালিয়ে কোনো গন্তব্যে যাচ্ছিলেন। পশু চরানো কিংবা কৃষিকাজে ব্যবহৃত এই খামারগুলির আকৃতি বিশাল। হঠাৎ খামারের মাঝে কিছু অস্বাভাবিক বস্তু দেখে বাবা এবং ছেলে গাড়ি থামান। সংবাদ মাধ্যমে দেওয়া ইন্টারভিউ অনুযায়ী উইলিয়াম ব্রাজেল বলেন,”পাতলা টিনের পাত, রাবার, মোটা কাগজের টুকরো এবং লাঠিসদৃশ কিছু বস্তু ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েছিলো খামারের অনেকটা জায়গা জুড়ে।”

রোজওয়েল শহর থেকে খামারটি প্রায় ৮০ মাইল দূরে অবস্থিত। এমন প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে এইসব জিনিস দেখতে পাওয়া অস্বাভাবিক এবং সন্দেহের। কিছুটা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন ব্রাজেল এবং তৎক্ষণাৎ কী সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিৎ তা বুঝে উঠতে না পেরে ফিরে আসেন বাড়ি। তবে বিরল এই বস্তু দেখে কোনোমতেই সন্দেহ কাটাতে পারছিলেন না তারা। প্রায় দুসপ্তাহ পরে প্রশাননের দ্বারস্থ হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। ৪ঠা জুলাই খামারে পড়ে থাকা বস্তুগুলি গাড়িবোঝাই করে রোজওয়েল শহরে নিয়ে যান ব্রাজেল। রোজয়েল শহরের প্রশাসনিক দপ্তরে ধ্বংসাবশেষগুলি হস্তান্তর করেন তিনি। শহরের শেরিফ জর্জ উইলকক্স ধ্বংসাবশেষগুলি দেখে কার্যত অবাক হয়ে যান।

আরও পড়ুন
ইজিয়ান সাগরের তলদেশে আস্ত জাদুঘর বানালো গ্রিস

নিউ মেক্সিকোতে ১৯৪৭ সালে  সত্যিই কি এসেছিল ভিনগ্রহের প্রাণী! জেনে নিন আসল সত্যিটা
রোজওয়েলের যে খামারে ইউএফও-এর ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গিয়েছিল

শেরিফ তৎক্ষণাৎ সিদ্ধান্ত নেন সামরিক বাহিনীর অফিসে জানানোর। প্রথমেই তিনি অনুমান করেন যে এটি কোনো নাশকতার পরিকল্পনা। সেই অনুমান করেই তিনি রোজওয়েল আর্মি এয়ারফিল্ডের কর্নেল বুচ ব্ল্যাংকার্ডের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বস্তুগুলি দেখান। তবে কর্ণেল বুচও কিছু বুঝতে না পেরে ‘চেইন অফ কমান্ড’ এর নিয়ম অনুযায়ী ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে জানান এই ঘটনাটি সম্পর্কে। সামরিক কর্মকর্তা জেনারেল রজার রাইমের কাছে পৌঁছনোর আগে ধ্বংসাবশেষগুলি বহু মানুষ, পুলিশ গোয়েন্দা সবালকেই আশ্চর্যচকিৎ করেছিল।

 

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের রেশ তখনও কাটেনি। পূর্ব ইউরোপের দেশগুলিতে তখন সদ্য নিজেদের মতাদর্শ প্রতিষ্ঠান করার চেষ্টা করছে সোভিয়েত ইউনিয়ন। অপরদিকে আমেরিকা যুদ্ধবিধ্বস্ত পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলিকে আর্থিকভাবে সাহায্য করছিল। আমেরিকার মূল লক্ষ্য ছিলো যাতে কোনোভাবে পুঁজিবাদের বিরুদ্ধে কমিউনিজম প্রধান শক্তিরূপে আত্মপ্রকাশ না করতে পারে সোভিয়েত। আমেরিকা এবং সোভিয়েত রাশিয়ার এই ঠান্ডা যুদ্ধের প্রভাব সেই সময় গোটা বিশ্বের উপর পড়েছিল। বিশ্বশান্তির মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে আমেরিকা এবং রাশিয়া একে অপরের সঙ্গে মেতে ছিলো স্নায়ুযুদ্ধে। যা সারাবিশ্বে দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বহুবার তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের পটভূমি তৈরি হয়েও অল্পের জন্য বিশ্ববাসী রক্ষা পায়।

আরও পড়ুন
জীবনের সব স্মৃতি নিয়ে আর্জেন্টিনার সমুদ্রগর্ভে দোতলা বাড়ি!

নিউ মেক্সিকোতে ১৯৪৭ সালে  সত্যিই কি এসেছিল ভিনগ্রহের প্রাণী! জেনে নিন আসল সত্যিটা
ঘটনার পরদিনই খবরের কাগজে প্রকাশিত হওয়া সংবাদ

জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে ১৯৪৫ সালে, আমেরিকা পারমাণবিক হামলা চালিয়ে সারাবিশ্বে আলোড়ন ফেলে দেয়। ইতিহাসের পাতায় একটি কালোদিনের তারিখ বাড়িয়ে আমেরিকা সমগ্র পৃথিবীর সামনে নিজেদের ক্ষমতা প্রদর্শন করেন। তখনও রাশিয়া পারমানবিক বোমা প্রস্তুত করতে সক্ষম হয়ে ওঠেনি, তবে চেষ্টায় ছিলো তারা। কিন্তু  আমেরিকার গুপ্তচর সংস্থার সদস্যরা অনুমান করেন ১৯৪৭ নাগাদ সোভিয়েত রাশিয়া আমেরিকার ওপর পারমাণবিক পরীক্ষা করবে। শোনা যায় কূটনৈতিক পদ্ধতিতে গোয়েন্দার মাধ্যমে রাশিয়া কার্যত চুরি করে আমেরিকার পারমানবিক বোমা তৈরির কৌশল। আমেরিকা এমনটা জানতে পেরে ‘প্রজেক্ট মঙ্গল’ নামক একটি গোপন সামরিক প্রকল্প নেয়। যার উদ্দেশ্য ছিলো খুব উঁচু থেকে ভাসমান বেলুনের সাহায্যে সোভিয়েত রাশিয়ার কার্যকলাপের ওপর নজর রাখা।

 

পরবর্তীকালে জানা যায় ব্রাজেলের খামারে পাওয়া ধ্বংসাবশেষগুলি আসলে উক্ত গোপন সামরিক প্রকল্পে ব্যবহৃত বেলুনগুলির ধ্বংসাবশেষ। সোভিয়েত ইউনিয়নের পারমানবিক বোমা পরীক্ষার শব্দতরঙ্গ সংগ্রহ করার জন্য কিছু মাইক্রোফোন, ইলেকট্রনিক সেন্সর সংযুক্ত ছিলো বেলুনগুলোর সঙ্গে। ওয়ারদারের পূর্বাভাস পাওয়ার জন্য তখনকার সময়ে আকাশে বিশাল আকারের বেলুন ভাসিয়ে দেওয়া হতো। যা ওয়েদার বেলুন নামে পরিচিত। গোপন সামরিক প্রকল্প ‘ প্রজেক্ট মঙ্গল’-এও তাই একই আকারের বেলুন আকাশে ভাসানো হতো যাতে সহজে কেউ শনাক্ত করতে না পারে। প্রজেক্ট মঙ্গলের তথ্যসূত্র অনুযায়ী এই বেলুনগুলো নিউ মেক্সিকোর বিভিন্ন অঞ্চল থেকেই ভাসানো হতো।

আরও পড়ুন
বাবার নজর এড়িয়ে বন্দুকের নলে মদ খেতে গিয়ে মৃত্যু হয়েছিল সম্রাট আকবরের এই সন্তানের

নিউ মেক্সিকোতে ১৯৪৭ সালে  সত্যিই কি এসেছিল ভিনগ্রহের প্রাণী! জেনে নিন আসল সত্যিটা
ওয়েদার বেলুনের ধ্বংসাবশেষ পরীক্ষা করছেন একজন সামরিক অফিসার

কিন্তু এই বিষয়ে অবগত ছিলেন না জেনারেল রজার নেইম। তাই পরের দিন রোজওয়েল আর্মি এয়ার ফোর্স একটি প্রেসবিবৃতিতে জানায় রোজওয়েলে ‘ফ্লাইং ডিস্ক’ এর সন্ধান পাওয়া গেছে। তৎক্ষণাৎ সারা বিশ্বে তোলপাড় পড়ে যায়, কারণ এলিয়েনদের নিয়ে কল্পবিজ্ঞানের নানা কাহিনী, রোমাঞ্চকর রূপকথা রচিত হলেও বাস্তবে তার কোনো প্রমাণ ছিলো না। কিন্তু আকস্মিক আমেরিকার সামরিক বাহিনীর এমন বিবৃতিতে সবাই নড়েচড়ে বসেন। পরবর্তীকালে সরকারি বিজ্ঞানীরা এসে পরীক্ষা করে বুঝতে পারেন আসলে এগুলি প্রজেক্ট মঙ্গলে ব্যবহৃত বেলুনের অংশবিশেষ। ফলত, পরে রোজওয়েল আর্মি এয়ার ফোর্স তাদের দেওয়া বিবৃতি তুলে নেয়।

 

তবে এমনটা শোনা যায় সামরিক বাহিনী ধ্বংসাবশেষের সঙ্গে ভিন্নগ্রহের প্রাণীদের দেহ উদ্ধার করেছিলো যা তারা লুকিয়ে রাখেন। আবার একাংশের মতে, বেশী আলোচনা হলে প্রজেক্ট মঙ্গলের তথ্য ফাঁস হতে পারে তাই তারা ফ্লাইং ডিস্কের তত্ত্ব সাজান। এই ধরণের তত্বের সাপেক্ষে যদিওবা প্রমাণ পাওয়া যায়।

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Stay Connected

7,808FansLike
20FollowersFollow

Latest Articles

error: Content is protected !!