দরজার কত রকম ব্যাখ্যা আছে এই বিশ্বে। কোনও দরজা স্বর্গে যাওয়ার পথ নির্ধারণ করে, কোনটা আবার নরকের দিক নির্দেশ করে বলে মানুষের বিশ্বাস। আবার কোনও দরজার অপরদিকে বিপুল ধন সম্পদ রাখা থাকে। স্বাভাবিকভাবেই বিভিন্ন ঐতিহাসিক ও পুরাকীর্তির ক্ষেত্রে দরজা একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়ে হাজির হয়। অনেক সময় নানান প্রচলিত কথা শুনে মানুষ কিছু দরজা খুলতে বড্ড ভয় পায়। তারা আতঙ্কিত হয়ে ওঠে এই ভেবে যে ওই দরজা খুললে গোটা বিশ্ব অভিশাপে পরিপূর্ণ হয়ে উঠবে। আবার কারোর ধারণা বন্ধ দরজা মানেই তা ঈশ্বরের নিজস্ব গুপ্তধনের আঁতুড়ঘর, সেখানে নাকি হাত দিতে নেই।
এই সমস্ত শুভ-অশুভ চেতনাকে কেন্দ্র করে বন্ধ দরজাকে ঘিরে বেশ কিছু মিথ তৈরি হয়ে গিয়েছে। এর ফলে এই পৃথিবীতে এমন বেশ কিছু দরজা আছে যা আধুনিক সময়ে কখনও খোলা হয়নি। হয়ত প্রাচীনকালে সেই দরজাগুলো খুলে দেখেছিল কেউ। তাতে হয়ত ক্ষতি হয়েছে বা ক্ষতি হয়নি, কিন্তু বর্তমান সময়ে সাধারণ মানুষ আর সেই দরজা খুলতে সাহস পায় না। এমনকি সরকার, আদালত কেউই মানুষের ভাবাবেগে আঘাত করে এই বিষয়গুলি নিয়ে কোনরকম সাহসী পদক্ষেপ করে না। এরকমই কয়েকটি বন্ধ থাকা দরজার ওপর আমরা চোখ বুলিয়ে নেব
আরও পড়ুন
বিনা অর্থ ব্যয়ে নিউ ইয়র্কের মতো শহরে থাকার উপায় করলেন এই মহিলা

টেরাকোটা সেনার পাহারারত দরজা
পাতকুয়া খুঁড়তে খুঁড়তে চিনের এক কৃষক পরিবার বেশকিছু মাটির তৈরি মূর্তি খুঁজে পান। তারা গোটা ঘটনাটি সরকারের নজরে আনেন। এরপর সেখানকার আর্কিওলজিক্যাল বিভাগ উপস্থিত হয়ে দেখে গোটা জায়গাটাই বিপুল পরিমান ঐতিহ্য বহন করছে। ঘটনাটি ঘটেছিল ১৯৭৪ সালে জিংওয়া প্রদেশে। পরে সেখানে খননকার্য চালিয়ে টেরাকোটার তৈরি একটি আস্ত সেনাবাহিনী আবিষ্কার করা হয়। ২০ হাজার বর্গমিটার অঞ্চল জুড়ে মাটির তলদেশে এই টেরাকোটা সেনারা অবস্থান করছিলেন।
আরও পড়ুন
রাষ্ট্রপতি ভবনে ঢুকে শরীরচর্চা শুরু করলো তালিবানরা দৃশ্য দেখে ভীত নেটিজেনরা

৮ হাজার টেরাকোটা সেনার পাশাপাশি ১৩০টি রথ, ১৫০টি ঘোড়সওয়ার সেনার মূর্তি এবং ৫০০টি মাটির ঘোড়া ওই জায়গা থেকে উদ্ধার করা হয়। এই টেরাকোটায় নির্মিত সেনাবাহিনীকে যে ভাবে সাজিয়ে রাখা ছিল, তাতে তার মধ্যস্থলে একটি দরজা দেখতে পাওয়া যায়। কিন্তু স্থানীয় মানুষদের বিশ্বাসকে মর্যাদা দিয়ে ঐ দরজা এখনো পর্যন্ত খোলা হয়নি।
গিজার পিরামিড
গিজার পিরামিড বা স্ফিংস অফ গিজা ইতিহাসের অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য একটি স্থাপত্য। আজ পর্যন্ত এই পিরামিড কিভাবে তৈরি হল তার কোনও সদুত্তর দিতে পারেননি গবেষকরা। তাই গিজার পিরামিড তৈরি হওয়া নিয়ে বেশকিছু সম্ভাবনা বাজারে ঘুরে বেড়ায়। কেউ মনে করেন ভিনগ্রহের প্রাণীরা এসে এই পিরামিড তৈরি করেছে। আবার কারোর ধারণা মিশরের মরুভূমির বালির তলায় এমন কোনও গোপন লাইব্রেরী আছে যেখানে এই পিরামিড তৈরীর প্রক্রিয়া লিখে রাখা আছে। তবে গিজার পিরামিডের সমস্ত কক্ষ ঢোকা সম্ভব হলেও এখনো পর্যন্ত একটি কক্ষের দরজা বন্ধ হয়ে পড়ে আছে। ওই দরজার অপরদিকে কি আছে তা এখনও পর্যন্ত জানা সম্ভব হয়নি। মিশর সরকার নির্দেশিকা জারি করে ওই দরজা খোলার পথ রুদ্ধ করে দিয়েছে।
আরও পড়ুন
বাড়িতে খাবার পৌঁছে দিচ্ছে খেলনা দিয়ে বানানো রোবট, জানুন এই অভিনব আবিষ্কারের কথা
তাজমহল
তাজমহল শাহজাহান তার প্রিয় বেগম মমতাজের স্মৃতির উদ্দেশ্যে নির্মাণ করেছিলেন এটা সকলেই জানে। মুঘল আমলের এই স্থাপত্য বিশ্বের নানা দেশ থেকে আজও পর্যটকদের ভারতে টেনে আনে। কিন্তু একটা বিষয় অনেকেরই জানা নেই তা হল এই তাজমহলের মোট দরজার সংখ্যা ১০৮৯, যার মধ্যে বেশকিছু কক্ষের দরজা আজও অতীতের মতোই বন্ধ হয়ে পড়ে আছে। একটিবারের জন্য এই সমস্ত দরজা খুলে দেখা হয়নি। ওই দরজাগুলির পেছনে কি রয়েছে তা কেউই জানেন না।
এই দরজাগুলি নিয়ে নানা ধারণা প্রচলিত রয়েছে। কারও কারও মতে ওই ঘরগুলি মার্বেলের তৈরি, দরজা খুললে কার্বণডাই অক্সাইড ওই মার্বেলের সংস্পর্শে এসে ক্যালসিয়াম কার্বোনেটে পরিণত হতে পারে। যার ফলে তাজমহলের বিখ্যাত চারটি মিনার ধ্বংস হয়ে যেতে পারেন। এই একই কারণে এই ঘরগুলিতে কোনো ভেন্টিলেশনের ব্যবস্থা রাখা হয়নি সেই সময়। আবার কারও কারও মতে এই ঘরগুলির কোনো একটিতে মুমতাজ মহলকে কবর দেওয়া হয়েছিল। এবং মারা যাওয়ার সময় মুমতাজ মহল যে অবস্থাতে ছিলেন আজও সেই অবস্থাতেই রয়েছেন। অনেকের মতে তাজমহলের ওই বন্ধ কক্ষের দরজাগুলো খুললে নাকি ভয়ঙ্কর অভিশাপ নেমে আসতে পারে।
আরও পড়ুন
হাতের লেখা খারাপ হওয়ায় ব্যর্থ হলো ব্যাঙ্ক ডাকাতির প্রয়াস গ্রেপ্তার বৃদ্ধ
পদ্মনাভস্বামী মন্দিরের রহস্যময় সপ্তম দরজা
কেরল তথা দক্ষিণ ভারতের অন্যতম আলোচ্য মন্দির এই পদ্মনাভস্বামী মন্দির। ত্রিবাঙ্কুরের রাজপরিবারের আমলে এই মন্দির নির্মাণ করা হয়েছিল। একে পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী মন্দির হিসেবে চিহ্নিত করা হয়ে থাকে। এই মন্দিরের অধিকার কার হাতে থাকবে তা নিয়ে মাঝেমধ্যেই বিতর্ক তৈরি হয়। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে পদ্মনাভস্বামী মন্দিরের ৬টি গোপন কক্ষের দরজা খুলে বিপুল পরিমাণ ধনরাশি উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। সর্বোচ্চ আদালতে যে হিসেব পেশ করা হয়েছে সেই অনুযায়ী এই গোপন কক্ষ থেকে ১ লক্ষ কোটি টাকারও বেশি ধন-সম্পদ উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। কিন্তু এখনও এই মন্দিরের একটি কক্ষের দরজা খোলা হয়নি।
আরও পড়ুন
ছোবল মেরেছিল সাপ, প্রতিশোধ নিতে সাপকেই কামড়ে মেরে ফেললেন এই ব্যক্তি
পদ্মনাভস্বামী মন্দিরের যে সপ্তম কক্ষের দরজা খোলা হয়নি তার গায়ে ধাতু দিয়ে নির্মিত সাপ আছে। তা দেখে অনেকেই আশঙ্কা প্রকাশ করেন এই কক্ষের রক্ষক নাকি ভগবান বিষ্ণুর ধারক শেষনাগ স্বয়ং। তাদের মতে এই কক্ষে যে বিপুল পরিমাণ ধন রাশি আছে তা গুনে শেষ করা যাবে না। কিন্তু পদ্মনাভস্বামী অর্থাৎ ভগবান বিষ্ণু স্বয়ং ওই ধন সম্পদের রক্ষক। তাই ওই দরজা খুলে ধন সম্পদ উদ্ধার করার চেষ্টা করা হলে ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে আসতে পারে এই পৃথিবীর বুকে। অন্তত পক্ষে পদ্মনাভস্বামী ভক্তদের একাংশের ধারণা গোটা ভারতকে ছারখার করে দেবেন ভগবান বিষ্ণু। মূলত সাধারণ ভক্তদের এই ধর্মীয় বিশ্বাসের কারণেই সুপ্রিমকোর্ট এখনও পর্যন্ত পদ্মনাভস্বামী মন্দিরের এই রহস্যময় গোপন কক্ষের দরজা খোলার অনুমতি দেয়নি। আশ্চর্যের ব্যাপার হল এই গোপন দরজাটিতে কোনরকম হাতল বা কোন কিছু নেই। তাই এই দরজাটি দেখলে অবাক হতে হবে যে সেটি কিভাবে নির্মাণ করা হয়েছিল!
বাল্ফ স্প্রিং হোটেলের রহস্যময় কক্ষ
কানাডার বাল্ফ স্প্রিং হোটেলের ৮৭৩ নম্বর কক্ষটি দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ পড়ে আছে। গোটা হোটেলের বিভিন্ন ঘরে অতিথিরা এসে থাকলেও এই কক্ষটি তালা বন্ধ অবস্থায় ফেলে রাখা থাকে। কারণ হোটেল কর্মচারীরা সহ অনেকে বিশ্বাস করেন ওই কক্ষের দরজা খুলে ভেতরে ঢুকলে মৃত্যু অনিবার্য।
আরও পড়ুন
রাজবাড়ির পাশেই পাওয়া গেলো গোপন সুড়ঙ্গ, গুপ্তধনের আশায় চাঞ্চল্য ছড়াল গ্রামবাসীদের মধ্যে
এই প্রসঙ্গে তারা জানান দীর্ঘদিন আগে এক দম্পতি তাদের শিশু সন্তানকে নিয়ে ওই ঘরটিতে ছিলেন। কিন্তু রাত্রিবেলায় লোকটি তার স্ত্রী এবং সন্তানকে হত্যা করে নিজে আত্মহত্যা করেন। তারপর থেকেই হোটেলের ওই ঘর থেকে নাকি প্রতিরাতে কান্নার শব্দ, ফিসফিস করে কথা বলার আওয়াজ শুনতে পাওয়া যায়। মূলত ভূতের ভয়েই হোটেলের এই ঘরটির দরজা আর খোলা হয় না।