ক্রুশচিশা নদী। পূর্ব ইউরোপের বলকান অঞ্চলের দিনারিক আল্পসকে ঘিরে গড়ে ওঠা দেশ বসনিয়া অ্যান্ড হারজেগোভিনা, সে দেশেরই ছোট এক নদী। গ্রাম, অরণ্যের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত ক্রুশচিশা ইউরোপের শেষ তিনটি অবাধ-প্রবাহিত নদীর মধ্যে অন্যতম। ভূতাত্ত্বিক পরিভাষায় এদেরই free-flowing river বলা হয়। সেই সাবলীল গতির উপরও এসে পড়ল কর্পোরেট পুঁজির করালচক্ষু। ক্রুশচিশা গ্রামের কাছে দুটি বড় বাঁধ এবং একটি ছোট জলবিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণের পরিকল্পনায় সিলমোহর দেওয়া হল। কিন্তু বাঁধ প্রকল্পের পরিকল্পনায় বাধ সাধলেন গ্রামের এক চল্লিশ ছুঁইছুঁই মহিলা। মাইদা বিলাল। আশপাশের জঙ্গল, পাখির ডাক, নদীর কাকচক্ষু জল – সেসবের সঙ্গে শৈশবের স্মৃতি। যন্ত্রসভ্যতার আগ্রাসনে হারিয়ে যাবে সেই স্মৃতিপট। অতএব, লড়াই শুরু হল। পাশে পেলেন নিজ পরিবারকে, গ্রামের আরও অনেককেই। সংগঠিত হল আন্দোলন। পুরোভাগে থাকলেন মহিলারা। নদীর ওপর রয়েছে একটি ব্রিজ, বাঁধের কাজ শুরু করতে গেলে সেই ব্রিজ পার হতে হবে। মাইদার দলবল বসে গেলেন সেই ব্রিজের ওপর। ১ দিন, ২ দিন, ৩ দিন… একসময়ে চিরাচরিত দমননীতি অবলম্বন করে শুরু হল পুলিশি আক্রমণ। আক্রান্ত হলেন মাইদা নিজে, তাঁর সত্তর বছর বয়সী বাবাও। তাও দমলেন না কেউ। বরং আরও শক্ত হল লড়াইয়ের পণ, সংগঠিত হল আন্দোলনের ভিত। টানা ৫০৩ দিন নদী আগলে বসে থাকলেন সকলে। মামলা গড়াল আদালতে। অবশেষে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসে সরকারি তরফে খারিজ করা হল এই প্রকল্পকে। আইনি লড়াই জিতলেন মাইদারা। মাইদার এই লড়াই স্বীকৃতি পেয়েছে আন্তর্জাতিক স্তরে। ২০২১ সালের ‘দ্য গোল্ডম্যান এনভায়রনমেন্টাল প্রাইজ’, যা কিনা চলতি স্তরে ‘গ্রিন নোবেল’ নামেই পরিচিত, ইউরোপ থেকে সেই পুরস্কার এসেছে মাইদার ঝুলিতে। প্রতি বছর ছ’টি মহাদেশের ছ’জন তৃণমূল স্তরের পরিবেশযোদ্ধাদের দেওয়া হয় এই পুরস্কার। চূড়ান্ত ব্যস্ততার মধ্যে ‘ভিন্নসময়’কে সময় দিয়েছেন মাইদা। তাঁর সেই লড়াইয়ের কথা শুনলেন প্রতিনিধি সোহম দাস।
- মাইদা, আমাদের তরফ থেকে প্রথমেই আপনাকে আন্তরিক অভিনন্দন।
অসংখ্য ধন্যবাদ। শুধুমাত্র অভিনন্দন জানানোর জন্যই নয়, আপনারা যে আমাদের এই জয়ের আনন্দকে ভাগ করে নিতে চেয়েছেন, তার জন্যও।
- এই পুরস্কারলাভ আসলে কতখানি স্বস্তি দিচ্ছে?
আমি ভীষণই আনন্দিত। আজকে সারা পৃথিবী আমাদের এই ছোট গ্রামের মানুষদের প্রাণপাত লড়াইকে স্বীকৃতি দিয়েছে।
আরও পড়ুন
ছ’মাস বয়সী শিশুকে ডাস্টবিনে ছুঁড়ে ফেলে দেওয়া হয়েছে, আমরা তুলে নিয়ে গিয়ে তাকে কবর দিয়েছি
- ইউরোপের শেষ তিনটি অবাধ-প্রবাহিত নদীর মধ্যে ক্রুশচিশা অন্যতম। সর্বসাধারণের জন্য এই ধরনের নদীগুলি কতখানি গুরুত্বপূর্ণ?
হ্যাঁ, ঠিক। ক্রুশচিশা তেমনই এক নদী, যার গতি অবাধ এবং এর জলও মানুষ নির্দ্বিধায় পান করে থাকেন। সেটাই বলকান অঞ্চলের এই নদীগুলির সবচেয়ে বড় সম্পদ, যা কিনা পুঁজিবাদীদের দ্বারা প্রতিনিয়ত আক্রান্ত হচ্ছে। নদীগুলি টিকে থাকবে কিনা, সেটাই এখন বড় প্রশ্নের মুখে দাঁড়িয়েছে।
- তারপরেও, কর্তৃপক্ষ থেকে বারবার এই ধরনের প্রকল্পে সিলমোহর দেওয়া হচ্ছে। এর পিছনে কী ধরনের প্রবণতা রয়েছে বলে আপনার মনে হয়?
সব সিলমোহর কিন্তু আইনি রাস্তায় আসছে না। সেটা আমরা BiH-র (বসনিয়া অ্যান্ড হারজেগোভিনাকে ওখানকার স্থানীয় মানুষজন ছোট করে BiH নামে ডাকেন) আদালতে প্রমাণও করেছি কারণ, আমাদের লড়াইটা এখানে ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আমরা সরকারি নীতি এবং নদী সুরক্ষার ক্ষেত্রে তাদের যে ব্যর্থতা, তার তীব্র বিরোধিতা করেছি। যে পরিবেশ-ধ্বংসী প্রকল্পের নির্মাণ শুরু হওয়ার কথা হয়েছিল, সেই চক্রান্তও রুখে দিতে পেরেছি। অডিট শপও তৈরি হচ্ছিল, সেই নির্মাণকেও আটকেছি। সঙ্গে, যেসব জায়গায় নদী বিপদের মুখে, সেখানে কড়া নিয়ম করে ছাড় চুক্তি লাগু করা হোক, এই নীতি নিয়েছি। যে জল পানের উপযোগী, সেই জলকে রক্ষা করা তো সংবিধানের দায়িত্ব। কারণ, জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী মানুষ। আর প্রকৃতির প্রতি তার এই খারাপ মনোবৃত্তি দিনকে দিন বেড়েই চলেছে।
আরও পড়ুন
শঙ্কর চক্রবর্তীকে বলেছিলাম তুমি যদি কালী ব্যানার্জির অভিনয় দেখে থাকো সেটা ভুলে যাও
- একটি সাক্ষাৎকার থেকে জানতে পারলাম যে, এর আগে আপনার সেভাবে অ্যাক্টিভিজমের অভিজ্ঞতা ছিল না। সেই সূত্রেই আমার প্রশ্ন, এই দীর্ঘ লড়াইয়ের জন্য অনুপ্রেরণা পেলেন কীভাবে? অত মানুষকেই বা একজোট করলেন কীভাবে?
হ্যাঁ, এটা ঠিক যে, পরিবেশ বিষয়ে আগে কখনও অ্যাক্টিভিজমের অভিজ্ঞতা ছিল না। তবে, আমি এমন একজন মহিলা যে সবসময়েই সুবিচারের জন্য লড়াই করে এসেছে। এই নদী, তার বিশুদ্ধ জল এবং পরিবেশটাকে বাঁচাতে যে লড়াইটা আমি শুরু করলাম, সেই লড়াইয়ের অনুপ্রেরণা এই নিরন্তর লড়াইটাই। আমার নিজের জীবনের যে ব্যক্তিগত লড়াই, সেই লড়াই থেকেই বাকি সমস্ত লড়াইয়ের শক্তি আমি পেয়েছি। আমার এই ছোট অঞ্চলে যেকোনো ধ্বংসাত্মক প্রকল্প এলে তাকে আমি রুখব। আমাদের এখানে আমিই প্রথম মহিলা যে সমাজ এবং পরিবেশের প্রতি তার দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে পেরেছে। এবং সেই কারণেই আজকে আমি সকলকে এই পরামর্শ দিতে পারি, সমাজে বদল আনতে গেলে আগে নিজেকে বদলাতে হবে।
- আন্দোলন ধীরে ধীরে কীভাবে সংগঠিত হল, সেই বিষয়ে জানতে চাইব।
আন্দোলন গড়ে ওঠার পেছনে সোশ্যাল নেটওয়ার্কের বিরাট ভূমিকা আছে। একজন স্থানীয় শিক্ষক পাওয়ার প্ল্যান্ট নির্মাণের বিষয়ে লিখতে শুরু করেন। আমি নিশ্চিত, তিনি সরকারি উচ্চমহলের কারও থেকে এই খবর জেনেছিলেন। পাওয়ার প্ল্যান্ট নির্মিত হলে নদীর কী ধরনের ক্ষতি হতে পারে, সেই বিষয়ে তিনি লেখেন। এরপর ধীরে ধীরে আন্দোলন জোরদার হয়। আমাদের লক্ষ্য ছিল একটাই, যেকরে হোক জলবিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণকে রুখতে হবে। কারণটা সহজ। আর তো এই অল্পই প্রাকৃতিক সম্পদ অবশিষ্ট রয়েছে। আমাদের গোটা অঞ্চলের মানুষের স্বার্থে এই ধরনের ‘উন্নয়ন’-এর কোনও প্রয়োজন নেই।
আমাদের আন্দোলন যত এগোতে থাকে, তত আমাদের এই নীতি দৃঢ় হয় – ‘আমরা আমাদের ক্রুশচিশা নদীকে কেড়ে নিতে দেব না। আমরা চাই গ্রামীণ পর্যটন, এবং ক্রুশচিশা পাহাড়ের রক্ষণাবেক্ষণ।’
- আন্দোলনের একটা পর্যায়ে তো আপনাদের ওপর পুলিশি আক্রমণ হয়েছিল। আপনার সত্তর বছর বয়সী বাবাও আক্রান্ত হয়েছিলেন। ঘটনা হিসেবে দেখতে গেলে বেশ ভয়েরই, কারণ, আন্দোলনের ক্ষেত্রে এই ধরনের উস্কানিমূলক ঘটনা খুবই ক্ষতিকারক। সেখানে আন্দোলনের নেত্রী হিসেবে পরিস্থিতি সামলেছিলেন কীভাবে? সহযোদ্ধাদের প্রতি আপনার বার্তা কী ছিল?
হ্যাঁ। ২০১৭ সালের ২ আগস্ট ওই নির্মাণ কোম্পানি তাদের ভারী সব যন্ত্রপাতি নিয়ে এখানে আসে। আমরা সঙ্কল্প নিয়েছিলাম প্রত্যেক দিন ২৪ ঘণ্টা বসে থেকে নদী পাহারা দেব। কিন্তু কোম্পানি এই প্রকল্পের পিছনে টাকা ঢেলেছে, তারাও নাছোড়। যদিও ততদিনে আমাদের উকিল এরকম বেআইনি পাওয়ার প্ল্যান্ট নির্মাণের বিরুদ্ধে আইনি লড়াই শুরু করেছেন। ২৪ আগস্ট সকালবেলায় বিনিয়োগকারীরা স্পেশাল ইউনিট পাঠায়, যাতে ব্রিজের ওপর থেকে আন্দোলনকারীদের সরিয়ে যন্ত্রপাতি ঢোকানোর রাস্তা সহজ করে দেওয়া যায়। গ্রামের মধ্যে দিয়ে পাহাড়ের দিকে যেতে গেলে এই ব্রিজটাই একমাত্র রাস্তা।
আরও পড়ুন
বাবা বললেন My dear son reflected glory will spoil you তুমি নিজে থেকে কিছু করো
প্রচণ্ড ঝামেলা শুরু হয়, আপনি ভিডিও দেখলেই বুঝতে পারবেন। ভিডিওগুলো সেই সময়ে গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছিল। ভয়ানক আঘাত পেয়েছিলাম আমরা, ওই দুঃসহ স্মৃতি ভোলাও অসম্ভব। কিন্তু, তাও আমরা লড়াইয়ের জমি ছাড়িনি। কারণ যে কথাগুলো ভেবে এই লড়াই শুরু করা, সেই কথাগুলোর প্রতি আমাদের ভালোবাসা, তাদের প্রতি আমাদের সৎ থাকতে হবে। আমার বাবা যেহেতু আমাকে বাঁচাতে চাইছিলেন, তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। আমি সবচেয়ে বেশি আঘাত পেয়েছিলাম এই ঘটনায়। এরকম যন্ত্রণাদায়ক অভিজ্ঞতা আমাকে ব্যক্তিগতভাবে ভীষণ প্রভাবিত করেছিল। পরিস্থিতি সামলানো খুব কষ্টকর ছিল। এখনও আমাদের লড়াই শেষ হয়নি, তখন থেকে আজ অবধি যে যে নীতি নিয়ে আমরা চলেছি বা যে বার্তা দিয়ে এসেছি একে অপরকে, সেটাই আমাদের বাঁচিয়ে রেখেছে। আমরা কেবল ভেবে এসেছি, আমরা নিজেরাই নদী এবং এমন একটি বিধ্বংসী প্রকল্প যতদিন না খারিজ হচ্ছে, ততদিন আমরা লড়াই ছাড়ব না।
- শেষ পর্যন্ত ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসে প্রকল্পটিকে বাতিল করা হয়। তারপর থেকে আড়াই বছর কেটে গিয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি কীরকম?
২০১৮ সালের ডিসেম্বরে নিম্ন আদালতের রায় আমাদের পক্ষে আসে। বেআইনি নির্মাণের অনুমতি খারিজ হয়েছে। বর্তমানে বসনিয়া অ্যান্ড হারজেগোভিনার সুপ্রিম কোর্টে দুটি ছাড় চুক্তির মামলা চলছে, এবং এখনও বিভিন্ন ক্যান্টন (একটি বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চল বিভাগ, যা কিনা আয়তন এবং জনসংখ্যায় অন্যান্য বিভাগ যেমন কাউন্টি বা রাজ্যের তুলনায় বেশ ছোট; স্যুইজারল্যান্ড-সহ ইউরোপের বেশ কিছু দেশে এই বিভাগটি রয়েছে; বসনিয়া অ্যান্ড হারজেগোভিনাতে এমন দশটি ক্যান্টন রয়েছে) প্রশাসন তাদের স্থানিক পরিকল্পনার মধ্যে মিনি হাইড্রো পাওয়ার প্ল্যান্ট নির্মাণের জন্য জায়গা ছেড়ে দিচ্ছে।
আরও পড়ুন
আমাদের এখানে আলোকসজ্জার বিবর্তনের কথা যদি বলতে হয় সেটা একপ্রকার ছেলেখেলা-দীপক মুখোপাধ্যায়
- আমাদের ভারতেও নদীকে বাঁচাতে এমন বেশ কিছু আন্দোলন গড়ে উঠেছে। একটি তো খুবই বিখ্যাত, ‘নর্মদা বাঁচাও আন্দোলন’। নব্বইয়ের দশকের শুরুর দিকে এই আন্দোলন ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে। পুরোভাগে ছিলেন অ্যাক্টিভিস্ট মেধা পাটেকর, যিনি নিজের পিএইচডি ডিগ্রি ছেড়ে দিয়ে নর্মদাকে বাঁচাতে এগিয়ে আসেন। এই আন্দোলনও সেই সময়ে সারা বিশ্বে সাড়া ফেলে দিয়েছিল। আপনি এটির সম্পর্কে শুনেছেন?
না, দুর্ভাগ্যবশত, এই আন্দোলনটি সম্পর্কে আমার কিছু জানা নেই। কিন্তু মেধা পাটেকরের ঘটনাটি শুনে চমৎকার লাগল। উনি যেমন পিএইচডি ছেড়ে এসেছেন একটা সমাজকে বাঁচাতে চেয়ে, সেটার সঙ্গে আমি নিজের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতাকে ভীষণ মেলাতে পারছি। আমার লড়াইও প্রায় একই, এই চারবছরে আমাকেও আমার কেরিয়ার, চাকরি, আরও অনেক কিছুই ছেড়ে আসতে হয়েছে, আমার পরিবার আমার জন্য ভুগেছে, কিন্তু আমার দর্শন খুব পরিষ্কার। আমার ভাবতে গর্ব হয় যে, আমাদের দেশে এরকম পরিবেশ-বিমুখ প্রকল্পের বিরুদ্ধে আমরাই প্রথম এমন লড়াই শুরু করলাম, এবং আমি চাইব, এই গ্রহে আরও যারা একই সমস্যার মুখে পড়ছেন, তাঁরাও যেন এগিয়ে আসেন এইভাবেই।
কোনোদিন সুযোগ হলে আমি অবশ্যই শ্রীমতী মেধা পাটেকরের সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে আলাপ করতে চাই। সেটা আমার সবচেয়ে বড় সাফল্য হবে। পরিবেশের প্রতি তাঁর এই ভালোবাসা এবং নিষ্ঠা দেখে তাঁর প্রতি আমার শ্রদ্ধা বেড়ে গেল।
- কৌতূহল থেকে একটা প্রশ্ন করছি। পরিবেশ বাঁচানোর লড়াইয়ের ক্ষেত্রে আমরা সেই প্রাচীন সময় থেকে দেখে এসেছি যে, মহিলারা সবসময়েই এই লড়াইয়ের পুরোভাগে নেতৃত্ব দেন। বর্তমানে একটি সতেরো-আঠেরো বছরের মেয়ে এই পরিবেশ ইস্যু নিয়ে গোটা বিশ্বে সাড়া ফেলে দিয়েছে। আপনার কি মনে হয়, মেয়েরা পরিবেশের খুব কাছাকাছি থাকেন বলে এই ধরনের আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া তাঁদের পক্ষে খুব সহজ হয়?
হ্যাঁ, একদমই। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, মেয়েরা পরিবেশের সঙ্গে অনেক বেশি একাত্ম থাকেন। কারণ, একজন নারীর শরীরে যেভাবে প্রাণের জন্ম হয়, প্রকৃতিও তো একইভাবে প্রাণের জন্ম দেয়। নদীর মধ্যেও তো নারীত্ব রয়েছে, আবার ভালোবাসার আকর্ষণও হয় একজন নারীর প্রতিই। প্রকৃতিকে বাঁচাতে তাই নারীরাই অগ্রভাগে থাকে কারণ তারা একটা ‘জীবন’কে বাঁচাতে চায়। আমার মনে হয়, এই একটা শব্দেই সম্পূর্ণ বিষয়টা ব্যাখ্যা করা যায়।
আরও পড়ুন
এক্সক্লিউসিভ: মুখোমুখি হান্নান মোল্লা – বাংলার কৃষকরা এই আন্দোলনে নেই এটা সম্পূর্ণ মিথ্যে কথা
- শেষ প্রশ্ন। এই পুরস্কার আপনাদের লড়াইয়ের ক্ষেত্রে কতটা সুবিধা করবে বলে আপনার মনে হয়?
পুরস্কারটা পেয়ে মিশ্র অনুভূতি হচ্ছে। কারণ, স্থানীয় মানুষজনের পাশে গিয়ে যখন দাঁড়িয়েছিলাম, তখন ভাবিওনি যে আমাদের এই লড়াই এতখানি স্বীকৃতি পাবে এবং বিশ্বের আরও বহু মানুষকে এমন আন্দোলন গড়ে তুলতে প্রেরণা জোগাবে।
গোল্ডম্যান পুরস্কার কমিটিকে আমি ধন্যবাদ জানাতে চাই কারণ, এই পুরস্কারের ফলে আন্দোলনের পালে হাওয়া লাগল। নদী, জঙ্গল, বিশুদ্ধ হাওয়া এবং মানুষের বেঁচে থাকার জন্য আরও যে সমস্ত প্রাকৃতিক সম্পদের প্রয়োজন, সেইসব কিছুকে রক্ষা করতে এই ধরনের আন্দোলন গড়ে ওঠা প্রয়োজন।
আজকে যখন জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে পৃথিবী এবং সমগ্র মানবজাতি ভয়াবহ বিপদের মুখে দাঁড়িয়ে (এবং যে ক্ষতির জন্য মানুষ নিজের দায়ী), সেখানে আমরা একসঙ্গে একটি বড় আন্দোলনে জোট বেঁধেছি। এবং তা শুধুমাত্র এরকম নানা বিধ্বংসী প্রকল্পের কবল থেকে এই গ্রহকে বাঁচানোর জন্য। কারণ, আমরা মনে করি, এই গ্রহই আমাদের প্রকৃত মা।
বিশেষ কৃতজ্ঞতা: প্রথম আলো, ইকোলজিক্যাল সোসাইটি “বিস্ত্রো” (Ekološko društvo „Bistro“), সানেলা তুনোভিচ (Sanela Tunovic)