ঐতিহাসিক লালকেল্লায় প্রধানমন্ত্রী জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে দেশের ৭৫তম স্বাধীনতা দিবস পালনের সূচনা করলেন। পতাকা উত্তোলন করে দেশবাসীর উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র দামোদর মোদি। অতিথী হিসেবে উপস্থিত ছিলেন টোকিও অলিম্পিকে অংশগ্রহণকারী ভারতীয় খেলোয়াড়রাও উপস্থিত ছিলেন। সারা দেশ স্বাধীনতা আন্দোলনের দীর্ঘ লড়াইতে নিহত সংগ্রামীদের স্মরণ করলো আজ। আন্দোলনের মূল কান্ডারীদের, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের, যাঁদের অনুপ্রেরণায় আপামর ভারতবাসী ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলো তাদেরও আজ স্মরণ করার দিন। ইতিহাসের পাতায় এমন অনেক নাম বারংবার উঠে এসেছে। তবে এমন কিছু নেতা- নেত্রী আছেন যাঁদের নাম সচরাচর এত আলোচিত হয় না। তারা উপেক্ষিতই থেকে গেছেন কালের নিয়মে। এমনই এক নেত্রী হলেন ভিকাজী রুস্তম কামা।
১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে জার্মানীর স্টুটগার্টে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক সমাজতান্ত্রিক মহাসভায় সর্বপ্রথম তেরঙা পতাকা ওড়ান, অগ্নিকন্য ভিকাজী রুস্তম কামা। তবে সেই তেরঙা ছিলো ভারতের জাতীয় পতাকার প্রথম সংস্করণ। সবুজ, জাফরণ এবং লাল রঙের পতাকা ছিলো সেসময়। ১৮৬১ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর এক ধনী পার্সি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন ভিকাজী। তিনি ছিলেন বিখ্যাত ব্যবসায়ী সরাবজি ফ্রামজি প্যাটেলের কন্যা। ১৮৮৫ সালে তিনি বিখ্যাত আইনজীবী রুস্তমজি কামার সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্কে আবদ্ধ হন। রুস্তমজি পেশায় ব্রিটিশ সরকারের আইনজীবী ছিলেন, এবং তিনি মূলত ব্রিটিশদেরই পক্ষ নিতেন। কিন্তু ভিকাজীর মধ্যে ছিল এক প্রবল জাতীয়তাবাদী সত্ত্বা। তিনি ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলেন। ফলত রুস্তমজির সঙ্গে অচিরেই বিচ্ছেদ ঘটে।

১৮৯৬ এর ভয়ঙ্কর প্লেগ মহামারীর কবলে যখন গোটা দেশ বিধ্বস্ত, প্রতিদিন মারা যাচ্ছে মানুষ; সেই সময় ভিকাজী নিজেকে নিযুক্ত করেন মানবসেবায়। স্বেচ্ছাসেবী হয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে মিশে যান তিনি। চিকিৎসার দায়িত্ব নেন হতদরিদ্র মানুষদের। তবে কিছুদিনের মধ্যে তিনিও আক্রান্ত হন এই সংক্রমক রোগে। শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় বাধ্য হয়ে তাঁকে চিকিৎসার উদ্দেশ্যে বিলেত যেতে হয়।
তবে ইংল্যান্ডে গিয়ে বিশ্রাম না নিয়ে তিনি নানা কর্মসূচিতে যোগ দিতে শুরু করেন। তৎকালীন ক্ষমতাবান নেতৃত্ব, যেমন লালা হরদয়াল, দাদাভাই নাওরোজি, শ্যমজি কৃষ্ণ ভার্মাদের সঙ্গে পরিচয় ঘটে ভিকাজীর। তাঁর গতিবিধির ওপর নজর রেখে ব্রিটিশ সরকার, পরে সরকারের পক্ষ থেকে বিজ্ঞপ্তিও জারী করা হয়। বলা হয় কোনোরকম জাতীয়তাবাদী কর্মকাণ্ডে না জড়ানোর চুক্তি স্বাক্ষর না করলে ভারতে ফিরতে দেওয়া হবে না তাঁকে। কিন্তু ব্রিটিশদের চোখ রাঙানিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে তিনি এই বিজ্ঞপ্তি প্রত্যাখ্যান করেন।

আরও পড়ুন
প্রত্নতাত্ত্বিক খনন চলাকালীন হদিস মিলল প্রায় ২০০০ বছর পুরোনো ফাস্ট ফুড দোকানের
পরবর্তীতে ভিকাজী প্যারিস চলে আসেন। সিং রেবাভাই রানা ও মাঞ্চেরশাহ বুর্জররজি গোদরেদের সঙ্গে যৌথভাবে গঠন করেন ‘প্যারিস ইন্ডিয়ান সোস্যাইটি’। সাহিত্য গুনে সমৃদ্ধ ভিখাজী অনেক বৈপ্লবিক কবিতা, গান রচনা করেন এবং তা প্রকাশ ও বিতরণ করতে থাকেন। কখনও দেশাত্মবোধক কবিতা নিষিদ্ধ হওয়ায় তাঁর কলমে ফুটে উঠেছে ‘বন্দে মাতরম’ এর মতো রচনা, কিংবা বিপ্লবী মদন লাল ঢিঙ্গরা’র ফাঁসীর বিরুদ্ধে সরব হয়ে ‘মদনের তলোয়ার’ এর মতো লেখাও।
১৯০৭ সালের ২২ আগস্ট ভিকাজী বিদেশের মাটিতে প্রথম ভারতীয় পতাকা উত্তলন করেন। জার্মানীর স্টুটগার্টে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক সমাজতান্ত্রিক মহাসভায় ভারতীয়দের নৈতিক অধিকার,ব্রিটিশদের হাত থেকে দেশের মুক্তির দাবী তোলেন এই তেজস্বিনী। তিনি শ্যমজি কৃষ্ণ ভার্মার সঙ্গে যৌথভাবে ভারতীয় জাতীয় পতাকার প্রথম সংস্করণের নকশাও তৈরি করেন। ওপরের সবুজ অংশে আটটি পদ্ম, মাঝের জাফরানী রঙের অংশে হিন্দিতে লেখা বন্দেমাতরম এবং নীচের লাল অংশের বামদিকে একটি উদীয়মান সূর্য এবং ডানদিকে একটি অর্ধকৃতী চাঁদ।
আরও পড়ুন
তিন বছরে প্রায় ৭০০ কোটি টন প্লাস্টিক রিসাইকেল করে নজির গড়লো ভারতের এই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা
১৯৩৫ সাল পর্যন্ত ভিখাজী ইউরোপে ছিলেন। হৃদরোগের ফলে তাঁর পক্ষাঘাতও হয় এবং তিনি ভারতে আসার জন্য ব্রিটিশ সরকারের কাছে আবেদন জানান। দীর্ঘ অপেক্ষার পর ১৯৩৫ এর নভেম্বর মাসে তিনি মুম্বাই ফেরেন। এর এক বছরের মাথায় ১৯৩৬ সালের ১৩ আগস্ট শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ভিখাজী।