ভয়াবহ ছবি খোদ কলকাতার বুকে। আমহার্স্ট স্ট্রিটের মাড়োয়ারি হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত তিনজনের মৃতদেহ জীবিত রুগীদের সঙ্গেই পড়ে থাকল ১২ ঘণ্টারও বেশি সময়। এর ফলে ওই হাসপাতলে ভর্তি অন্যান্য করোনা আক্রান্ত রোগীরা অসুস্থ বোধ করতে শুরু করেন। তারা দুপুরের খাবারও খাননি বুধবার। এই ভয়ঙ্কর তথ্য সামনে আসার পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ গোটা ঘটনার দায় কলকাতা পুরসভার ওপর চাপিয়েছেন। সেই সঙ্গে তাদের যুক্তি যা ঘটেছে করোনা বিধি মেনেই সবটা করা হয়েছে। কিন্তু এই ঘটনা প্রমাণ করে দিচ্ছে খাস কলকাতার অবস্থা ঠিক কতটা ভয়ঙ্কর।
মঙ্গলবার রাত বারোটা নাগাদ অক্সিজেনের অভাবে তিনজন করোনা আক্রান্ত মহিলা রুগী মাড়োয়ারি হাসপাতালের মহিলা কোভিড ওয়ার্ডে মারা যান। অন্যান্য মহিলাদের অভিযোগ রাত থেকেই দেহ ওখানে পড়েছিল। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ন্যূনতম দেহগুলি ঘিরে দেওয়ার প্রয়োজন বোধ করেনি। এমনকি বেলার দিকে ওই দেহগুলিতে পচন ধরলেও তা সরানো হয়নি। বারবার হাসপাতালে কর্মীদের সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য অনুরোধ জানানো হলেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। এমনকি ওই পরিস্থিতিতেই রুগীদের দুপুরের খাবার খেতে দেওয়া হয়। তারা ঘেন্নায়, আতঙ্কে খেতে পারেননি বলে জানিয়েছেন।
আরও পড়ুন
মুখ্যসচিবের ঘোষণা সত্ত্বেও জেলা থেকে অক্সিজেনের অভাবে একের পর এক মৃত্যুর খবর আসছে
শেষ পর্যন্ত প্রবল বিক্ষোভের পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ওই তিনটি দেহ ওই ওয়ার্ড থেকে সরিয়ে নিতে বাধ্য হন। এই বিষয়ে রুগীদের ক্ষোভের কথা তুলে ধরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা যাবতীয় দায় অস্বীকার করেন। তারা জানান নিয়ম অনুযায়ী ওই তিন করোনা আক্রান্তের মৃত্যু হলে কলকাতা পুরসভাকে খবর দেওয়া হয়েছিল। তারা শববাহী দল পাঠাতে দেরি করাতেই এই ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু অসুস্থ রুগীদের সঙ্গে কেন দীর্ঘক্ষন মৃতদেহ ফেলে রাখা হয়েছিল সেই প্রশ্ন করলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ করোনা বিধির দোহাই দিয়ে গোটা বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে এই ঘটনা অত্যন্ত ক্ষতিকারক। দীর্ঘ ১২ ঘণ্টারও বেশি সময় অন্যান্য রুগীদের মাঝখানে মৃতদেহ ফেলে রাখার ফলে তারা যে আতঙ্কিত হয়ে পড়বেন তা অত্যন্ত স্বাভাবিক ঘটনা। এর ফলে অসুস্থদের মনে প্রবল চাপ তৈরি হয়। সেইসঙ্গে পাশের বেডে মৃতদেহ থাকা অবস্থায় খেতে দেওয়ার ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন তারা।