পৃথিবী সত্যিই এক অদ্ভুত স্থান। নিয়মের পাশাপাশি বেনিয়মও এখানে একইসঙ্গে সহাবস্থান করে।আজও প্রকৃতির বহু রহস্য মানুষের অগোচরেই থেকে গিয়েছে। প্রকৃতির নিয়ম, কিংবা বেনিয়ম এখনও সবটা বোঝা সম্ভব হয়ে ওঠেনি মানুষের পক্ষে। এমনকী বিজ্ঞানও সেখানে ফেল করে গিয়েছে সম্পূর্ণভাবে। অভিকর্ষের নিয়ম অনুযায়ী উপর থেকে সবকিছুকেই নিচের দিকে নামতে হয়। তা সে গাছের ফল হোক বা আকাশের তারা, এমনকী নদী বা ঝর্ণার জলও; মধ্যাকর্ষণের টানে সমস্ত বস্তুই নিচের দিকে পতনশীল।
তাই তো কবি বিস্ময়ে বলে গিয়েছেন ‘বিপুলা এই পৃথিবীর কতটুকু জানি!’ উঁচু পাহাড়ের মাথা থেকে নিচে নেমে আসে ঝর্না এটাই প্রকৃতির নিয়ম। কিন্তু সেই নিয়মকে সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে চলেছে হাওয়াই দ্বীপের ওয়াইপুহিয়া ঝর্ণা। এখানে ঝর্ণাটির জলরাশির ধারা ওপর থেকে নিচে নয় বরং ঠিক উল্টোটা, নিচ থেকে ওপরে উঠে যায় ওয়াইপুহিয়া ঝর্নার স্রোত।
কিন্তু ঠিক কি কারণে হাওয়াইয়ের ওয়াইপুহিয়া ঝর্ণার এমন অদ্ভুত আচরণ? অভিকর্ষের সঙ্গে তার কিসের শত্রুতা? নাকি পুরোটাই ভেল্কি? এই ঘটনার প্রকৃত ভিলেন অথবা নায়ক দুইই বলা যায় উত্তর পূর্ব বানিজ্য বায়ুকে। এই ঝর্ণার যে ভৌগোলিক অবস্থান, হিসেব মতো সেখানকার ওপর দিয়েই প্রবাহিত হয় উত্তর পূর্ব ট্রেড উইন্ড। তার জোরালো প্রভাবই বাধ্য করে ঝর্নার অভিমুখ পরিবর্তন করতে। পরাজিত হয় নিউটনের অভিকর্ষের সূত্র।
তবে শুধুমাত্র হাওয়াইয়ের ওয়াইপুহিয়া ঝর্ণাই যে অভিকর্ষের বিপরীতে অবস্থান করা একমাত্র ঝর্ণা তা নয়। ইউ কে এর ‘কিন্ডার ফলস্’ অথবা আয়ারল্যান্ডের ‘ক্লিফস অফ মোহের’ এগুলিও অভিকর্ষের নিয়ম না মানা ঝর্ণা যেগুলির অভিমুখ নীচ থেকে ওপরের দিকে। তাহলে চিরাচরিত নিম্নগামী ঝর্ণার বদলে চোখকে একটু নতুনত্বের স্বাদ দিতে ওয়াইপুহিয়া কিম্বা কিন্ডার ফলস্ হতেই পারে ভ্রমনমোদী পাঠকের গন্তব্য।