ভারতীয় রাজনীতিতে বহেনজিকে নিয়ে বিতর্ক বরাবরের। প্রচলিত কথাই হল তিনি আসলে যেটা করেন তা সামনে থেকে দেখা যায় না। উত্তরপ্রদেশের ভোট এগিয়ে আসছে। ফের তাকে নিয়ে বিতর্ক মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। কদিন আগেই বহেনজি তথা মায়াবতী জানিয়ে দেন এবারের নির্বাচনে তার দল একাই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। তখনই জল্পনা তীব্র হয়েছিল বিরোধী শিবিরের ভোট ভাঙার জন্য মায়াবতীকে একা লড়ার দিকে এগিয়ে দিয়েছে বিজেপি। কারণ বিরোধী ভোট যত ভাগ হবে ততই বিজেপির সুবিধা। সোমবার আরেক প্রস্থ বিতর্ক উস্কে দিয়ে বহুজন সমাজবাদী পার্টির নেত্রী ঘোষণা করলেন রাজ্যে আসন্ন জেলা পঞ্চায়েতের ভোটেও তার দল অংশগ্রহণ করবে না। এ বিষয়ে তিনি কিছু যুক্তি অবশ্য দিয়েছেন। তবে রাজনীতির কারবারীদের অনুমান বিজেপির সুবিধা করে দিতেই ফের আরেকটি সিদ্ধান্ত নিলেন বহেনজি।
মায়াবতীর দাবি জেলা পঞ্চায়েতের ভোটে বিজেপি অন্যায়ভাবে তাদের ক্ষমতা প্রয়োগ করে জিতে যাবে। শুধু শুধু হারার জন্য তার দল প্রার্থী দেবে না। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “জেলা পঞ্চায়েত ভোটে যারা সরকারে থাকে তারাই রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ব্যবহার করে জিতে যায়। এই ভোটের কোনও মানেই হয় না। তাই আমরা এখানে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করব না।” বদলে দলীয় নেতা ও কর্মীদের মায়াবতীর নির্দেশ তারা যেন জেলা পঞ্চায়েতের ভোট নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে সংগঠন চাঙ্গা করার কাজ করে এই সময়। সেই সঙ্গে তিনি বলেন, “বিধানসভা ভোটে জিতে আমরা সরকার গঠন করব। তখন জেলা পঞ্চায়েতের সভাপতিরা এমনিতেই আমাদের দলে চলে আসবে!”
আরও পড়ুন
লক্ষ বছর আগের মানুষের আরেক গোত্রের পূর্বপুরুষের সন্ধান পেলেন বিজ্ঞানীরা

মায়াবতীর এই নির্দেশকে ঘিরে একটা প্রশ্ন বেশ ভালো মত ছড়িয়ে পড়েছে। তা হল কারা মায়াবতীর নির্দেশ মেনে সংগঠন মজবুত করার চেষ্টা করবে? কারণ গত কয়েক বছর ধরে বহুজন সমাজবাদী পার্টি নিষ্ক্রিয় হয়ে থাকায় ওই দলের বেশিরভাগ নেতাই সমাজবাদী পার্টিতে এসে নাম লিখিয়েছে। এমনিতেই আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে উত্তরপ্রদেশের ৪০৩ টি কেন্দ্রেই প্রার্থী দেওয়ার মত উপযুক্ত লোক বহুজন সমাজবাদী পার্টি খুঁজে পাবে কিনা সেটা নিয়েই প্রশ্ন আছে।
রাজনৈতিক মহলের মতে মায়াবতী আসলে জেলা পঞ্চায়েতের নির্বাচনে দুটো কারণে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন না। এক, বিধানসভা নির্বাচনের আগে ভোট ময়দানে লেজেগোবরে হয়ে তিনি দলীয় সমর্থকদের মনোবল নতুন করে আরও তলানিতে পৌঁছে দিতে চান না। আর দুই, বিজেপি যাতে না সমস্যায় পড়ে তার বন্দোবস্ত করা। এক্ষেত্রে সমাজবাদী পার্টির জয়কে প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলাই তার অন্যতম লক্ষ্য বলে বিশেষজ্ঞদের অনুমান। কারণ কয়েকদিন আগেই গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরের নির্বাচনে উত্তরপ্রদেশে প্রায় মুখ থুবড়ে পড়েছে বিজেপি। তাদের টপকে গিয়েছে সমাজবাদী পার্টি। এই অবস্থায় জেলা পঞ্চায়েতের নির্বাচনে বহুজন সমাজবাদী পার্টি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও তাদের পরাজয় একরকম অবশ্যম্ভাবী ছিল। বরং সমাজবাদী পার্টির ফের জয়জয়কার হবার সম্ভাবনাই বেশি। কিন্তু বহুজন সমাজবাদী পার্টি নির্বাচনে না লড়ায় বিধানসভা ভোটের প্রচারে মায়াবতী বলতে পারবেন তারা জেলা পঞ্চায়েতের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার না করাতেই সমাজবাদী পার্টি জিততে পেরেছিল।
আরও পড়ুন
আপেল বাঁচাতে শেষ পর্যন্ত সশস্ত্র রক্ষী নিয়োগ করলেন পুলিশ কর্তা!

এর পাশাপাশি মায়াবতী জানিয়েছেন সামনের বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে উত্তরপ্রদেশের বিধানসভা নির্বাচনে তার দল একাই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। জল্পনা তৈরি হয়েছিল মিমের সঙ্গে বহুজন সমাজবাদী পার্টি জোট বাঁধতে পারে। কিন্তু সেই সম্ভাবনা তিনি পুরোপুরি খারিজ করে দেন।