১৯ এপ্রিল, ২০২৪শুক্রবার

১৯ এপ্রিল, ২০২৪শুক্রবার

বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে করোনা টিকা দেওয়ার সর্বোচ্চ আদালতের প্রস্তাব খারিজ কেন্দ্রের

২১৮ পাতার লম্বা এফিডেভিট জমা করে কেন্দ্রীয় সরকার টিকাকরন প্রক্রিয়া সম্বন্ধে সর্বোচ্চ আদালতের প্রস্তাব খারিজ করে দিল। জানিয়ে দিল করোনা টিকা প্রদানের প্রক্রিয়া বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে চালানো সম্ভব নয়। এর জন্য জনগণকে নির্দিষ্ট টিকাকরণ কেন্দ্রে এসে এই পরিষেবার নিতে হবে। উল্লেখ্য সর্বোচ্চ আদালতের প্রস্তাব ছিল পোলিও টিকাকরণের মত দেশের প্রতিটি মানুষের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে করোনা টিকা প্রদান করা হোক। তাতে এক জায়গায় ভিড় হওয়ার সম্ভাবনা কমবে। আদালতের মতে এইভাবে ভিড় করে টিকা নেওয়ার ফলে মানুষের মধ্যে করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

কেন্দ্র এফিডেভিট জমা করে প্রথমেই টিকাকরন প্রক্রিয়া এবং করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের নীতি প্রণয়নের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ আদালতের ভূমিকা অস্বীকার করে। তারা পরিষ্কার জানিয়ে দেয় এটা পুরোটাই প্রশাসনিক বিষয় এবং এক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নেবে সরকার। এখানে সর্বোচ্চ আদালতের নাক গলানোর কোন‌ও প্রয়োজন নেই। এছাড়া কেন্দ্রীয় সরকারের বক্তব্য বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে বা আদালতের প্রস্তাব মত মোবাইল ভ্যানে করে টিকা নিয়ে প্রত্যন্ত গ্রামে পৌঁছে গিয়ে প্রতিটি মানুষকে টিকা প্রদান করা বাস্তবে অসম্ভব। তাদের মতে দেশে অত বেশি সংখ্যক স্বাস্থ্যকর্মী নেই, যারা প্রতিটি বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে টিকা প্রদান করবে।

আরও পড়ুন
কেরল আর অন্য রাজ্যে অক্সিজেন সহায়তা প্রদান করতে পারবে না বলে জানালেন বিজয়ন

এক্ষেত্রে পরিকাঠামোগত অপ্রতুলতার বিষয়টিকেও যুক্তি হিসেবে তুলে ধরেছে কেন্দ্র। তাদের মতে করোনা টিকা নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হয়। সেজন্য যে পরিকাঠামো দরকার প্রত্যন্ত গ্রামের পাড়ার ভিতরে সেই পরিকাঠামো গড়ে তোলা সম্ভব নয়। করোনা টিকাকরণের নিয়ম অনুযায়ী একজনকে টিকা প্রদানের পর ৩০ মিনিট স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বসে অপেক্ষা করতে হয়। তারপর শরীর সুস্থ থাকলে তাকে বাড়ি যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। এই বিষয়টি তুলে ধরে কেন্দ্রের বক্তব্য একটি বাড়িতে একজন বা দু’জন মানুষ হয়ত টিকা নেবেন। তার জন্য যদি একজন স্বাস্থ্যকর্মীকে ৩০ মিনিট বসে থাকতে হয় তবে টিকাকরন প্রক্রিয়া শেষ করতে বিপুল সময় লেগে যাবে।

কেন্দ্রের বক্তব্য প্রতিটি টিকাকরণ কেন্দ্রে অ্যাম্বুলেন্স রাখা থাকে। কোনও টিকা গ্রাহকের শারীরিক পরিস্থিতির অবনতি ঘটলে তাকে তৎক্ষণাৎ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়। কিন্তু প্রত্যন্ত গ্রামের মধ্যে দরজায় দরজায় গিয়ে টিকা দিলে এই পরিষেবা দেওয়া সম্ভব নয়। কারণ দেশে অত বেশি সংখ্যক অ্যাম্বুলেন্স নেই যে প্রতিটি বাড়ির দোরগোড়ায় তা নিয়ে পৌছে যাওয়া যাবে। এছাড়া টিকাকরণ কেন্দ্রে ডাক্তার উপস্থিত থাকে বলে জানিয়েছে কেন্দ্র। কিন্তু বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে টিকা দিলে সর্বত্র ডাক্তার পাঠানো সম্ভব নয় বলেও কেন্দ্রীয় সরকার জানিয়েছে।

আরও পড়ুন
রাজ্যের চাহিদার তুলনায় যৎসামান্য, আরও ৭ লক্ষ ৪৫ হাজার ডোজ টিকা এসে পৌঁছল এ রাজ্যে

এই প্রসঙ্গে কেন্দ্র পরিষ্কার জানায় কো-উইন অ্যাপের মাধ্যমে প্রত্যেকে নিজের নাম নথিভুক্ত করে বাড়ির পিন কোড দিয়ে নিকটবর্তী টিকাকরণ কেন্দ্র বেছে নিতে পারে। কেন্দ্রের কথা প্রত্যেকে নিজের পছন্দমতো সময়ে টিকাকরণ কেন্দ্রে এসে করোনার টিকা নিয়ে যাবে এই সুবিধা দেওয়া হয়েছে। এরপর বাড়িতে বাড়িতে টিকা পৌঁছে দেওয়ার যে প্রস্তাব আদালত দিয়েছে তা মানা সম্ভব।

কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে যে সমস্ত যুক্তি আদালতের সামনে তুলে ধরা হয়েছে তা ন্যায্য বলেই চিকিৎসকদের অভিমত। তবে তারা এটাও বলছেন সর্বোচ্চ আদালতের প্রস্তাব অনুযায়ী যদি বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে টিকা প্রদানের ব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব হয় তবে দেশে করোনা সংক্রমনের গতি অনেকটাই আটকানো সম্ভব। তবে আইন বিশেষজ্ঞরা সর্বোচ্চ আদালতে কেন্দ্রের আচরণের তীব্র সমালোচনা করেছেন।

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Stay Connected

7,808FansLike
20FollowersFollow

Latest Articles

error: Content is protected !!