গত এক দশকের গৃহযুদ্ধে সিরিয়ার প্রায় ৫ লক্ষ মানুষ প্রাণ হারিয়েছে! ভয়াবহ তথ্য প্রকাশ্যে নিয়ে এলো ইংল্যান্ডের এক মানবাধিকার সংগঠন। এই সংগঠনটি গৃহযুদ্ধে বিধ্বস্ত সিরিয়ায় মানবাধিকার রক্ষা নিয়ে কাজ করে থাকে। গৃহযুদ্ধে এক দশকের মধ্যে এত বিপুলসংখ্যক মানুষের মৃত্যু এর আগে কোথাও ঘটেনি। উল্লেখ্য এই ভয়াবহ তথ্য সামনে এলো যখন তখনও সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ থামার কোনও লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। বরং সে দেশের আসাদ সরকার বিদ্রোহীদের ওপর ঝাপিয়ে পড়ার পরিকল্পনা করছে। উল্টোদিকে বিদ্রোহীরা ইউরোপ এবং আমেরিকার সমর্থন পেয়ে আসাদ সরকারকে আবার কোণঠাসা করে ফেলার ছক কষছে।
এই মানবাধিকার সংগঠনটি এবছর মার্চ মাসে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে জানিয়েছিল সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে বলি হয়েছে ৩,৮৮,০০০ মানুষ। কিন্তু তারপরই তাদের কাছে খবর আসতে থাকে প্রকৃত সংখ্যাটি এর থেকে অনেকটাই বেশি। এরপর তারা স্থানীয় প্রতিনিধিদের থেকে বিস্তারিত তথ্য জোগাড় করতে শুরু করে। বিস্তারিত তথ্য জোগাড়ের পর তারা আগের রিপোর্ট সংশোধন করে নিয়ে জানিয়েছে গত এক দশকে সিরিয়ার গৃহযুদ্ধের বলি হয়েছেন সেখানকার ৪,৯৪,৪৩৮ জন। অর্থাৎ আগের হিসেবে থেকে প্রকৃত সংখ্যাটি এক লাখেরও বেশি বেড়ে গেল।
আরও পড়ুন
লকডাউন ভেঙে মেয়ের বিয়ের অনুষ্ঠান আয়োজন করে মহারাষ্ট্রে বিপাকে বিজেপি বিধায়ক
এ সংগঠনটি জানিয়েছে সিরিয়ার সরকারি বাহিনীর জেলখানায় অজস্র মানুষকে অত্যাচার করে মেরে ফেলা হচ্ছে। এক্ষেত্রে আসাদ প্রশাসনকেই কাঠগড়ায় তুলেছে তারা। তাদের দাবি সিরিয়ায় সরকারি বাহিনীর কারাগারে অত্যাচার করে বিদ্রোহীদের ৪২,০০০ কর্মী ও সমর্থককে গত এক দশকে হত্যা করা হয়েছে। তবে মুখোমুখি যুদ্ধে সিরিয়ার সরকারি বাহিনী ও বিদ্রোহীদের মৃত্যুর সংখ্যা প্রায় সমান সমান। উভয় পক্ষেরই দেয় লক্ষ্যের কাছাকাছি সমর্থকের মৃত্যু হয়েছে। তবে এই গৃহযুদ্ধে কট্টরপন্থী ইসলামিক স্টেট এবং আল-কায়েদার অজস্র কর্মী-সমর্থকও মারা গিয়েছে বলে তারা রিপোর্টে জানিয়েছে।
ওই রিপোর্টে জানানো হয় সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ সবচেয়ে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছিল ২০১২ সালের শেষের দিক থেকে ২০১৫ সালের নভেম্বর মাস পর্যন্ত। এই মধ্যবর্তী সময়ে সে দেশে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়। এই সময় উভয়পক্ষের সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা যায়। এই মুহূর্তে বাসার-আল-আসাদ অনুগত সিরিয়ার সেনাবাহিনী ও তার সমর্থক মিলিশিয়ারা মিলে গোটা দেশটির দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশি অঞ্চল নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হয়েছে।
আরও পড়ুন
অবসর নিয়েও রেহাই নেই, কেন্দ্রের কাছে থেকে শোকজের চিঠি পেলেন আলাপন
উল্লেখ্য একসময় সিরিয়ার বেশিরভাগ অঞ্চলের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছিল আসাদ প্রশাসন। কিন্তু ২০১৫ সাল থেকে গোটা হিসেব বদলে যেতে শুরু করে। রাশিয়া আসাদ বাহিনীকে সক্রিয়ভাবে সমর্থন করতে শুরু করার পরই তারা ঘুরে দাঁড়াতে থাকে। বিদ্রোহীদের কোণঠাসা করে দেওয়ার পাশাপাশি ইসলামিক স্টেট এবং আল-কায়দাকেও সিরিয়ার মাটি থেকে একরকম উচ্ছেদ করে ছেড়েছে আসাদ প্রশাসন। যদিও বিদ্রোহীদের আমেরিকা এবং ইউরোপের দেশগুলো অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে সাহায্য করছে বলে বারবার অভিযোগ উঠেছে।