বাংলা ও ওড়িশার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে স্থানীয় দিশি মদ হিসেবে তাড়ি ব্যবহৃত হয়। এটা কমবেশি সকলেই জানে। এই তাড়ি দু’রকম উপায়ে তৈরি হয়। একটা হচ্ছে খেজুর গাছের রসকে নির্দিষ্ট সময় ধরে গেঁজিয়ে প্রস্তুত হয়। আর দ্বিতীয় পদ্ধতিটি হল সিদ্ধ ভাতকে রেখে দেওয়া হয়, তাতে কিছুটা পচন ধরলে বা ছত্রাক সংক্রমিত হয়ে পড়লে তা থেকে তাড়ি প্রস্তুত হয়। ওড়িশায় এই তাড়িকে বলা হয় তোরানি। এবং এই পচন ধরা ভাত বা ছত্রাক সংক্রমিত ভাত সে রাজ্যে ‘পাখালা’ নামে পরিচিত। এই ভাত ওড়িশার আদিবাসী সম্প্রদায়ের প্রধান খাদ্য। এতদিন একে তথাকথিত সভ্য সমাজ রীতিমত হেলাফেলা করে এসেছে। কিন্তু ভুবনেশ্বর এমসের গবেষক দলের নতুন পর্যবেক্ষণ রিপোর্ট সামনে আসার পর গোটা ধারণা বদলে যেতে বাধ্য। কারণ ওই গবেষকরা জানিয়েছেন ছত্রাক সংক্রমিত এই ভাত খেলে মানুষের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বিপুল পরিমাণে বৃদ্ধি পায়!
বালামুরুগান রামদাসের নেতৃত্বে ২০১৯ সাল থেকে পাখালা’র উপর গবেষণা চালানো হচ্ছিল। সম্প্রতি তারা নিশ্চিত হয়েছেন যে এই ছত্রাক সংক্রমিত ভাতের মধ্যে বিপুল পরিমাণে ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে। সেই ফ্যাটি অ্যাসিড এই বিশেষ ধরনের ভাতের সঙ্গে শরীরে যাওয়ার ফলে অন্ত্র আরও শক্তিশালী ও কার্যকারী হয়ে ওঠে। আর এটা জানা কথা যে অন্ত্র যত সঠিকভাবে কাজ করবে ততই শরীরের ইমিউনিটি পাওয়ার বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। এক্ষেত্রেও সেটাই হয়।
আরও পড়ুন
এই গরু দেখার জন্য করোনা বিধি ভেঙে রাস্তায় নেমেছে কাতারে কাতারে ঢাকার মানুষ!

অথচ এক সময় মনে করা হত পাখালা খেলে শরীরে অনেক রকম সমস্যা তৈরি হয়। বিশেষ করে যকৃৎ খারাপ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা এর ফলে বৃদ্ধি পায় বলে মনে করতেন চিকিৎসকরা। এর পাশাপাশি এই ছত্রাক সংক্রমিত ভাত খেলে শরীরে ছত্রাকের সংক্রমণ ঘটার আশঙ্কা করতেন অনেকে। কিন্তু এই করোনা উত্তর দুনিয়ায় যখন সকলেই দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর কথা বলছে, সেই সময় এই নতুন গবেষণা প্রতিবেদনটি আশার আলো দেখাচ্ছে। কারণ খুব সহজেই পাখালা জোগাড় করা সম্ভব। বলা যেতে পারে গরিব মানুষের কাছে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে এটাই সেরা উপায়। কারণ এতে কোনও অতিরিক্ত অর্থ খরচ হয় না।
ভুবনেশ্বর এইমসের এই গবেষক দলটি স্থানীয় ২০ টি আদিবাসী পরিবার থেকে পাখালা’র নমুনা সংগ্রহ করে গবেষণা শুরু করে। আর তার প্রাথমিক রিপোর্ট বুঝিয়ে দিল কেন করোনার মতন ভাইরাসে সমাজের তথাকথিত সভ্য মানুষের ক্ষতি বেশী হচ্ছে, আর কেন নিম্নশ্রেণির মানুষ তুলনায় অনেক সহজে এই মারণ ভাইরাসকে আটকে দিতে সফল হয়েছে।