আগামী দু’একদিনের মধ্যেই কি কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় রদবদল করতে চলেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি? এই জল্পনা জোরদার হয়ে উঠেছে শুক্রবার বিকেল থেকেই। অসমের সদ্য প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল হঠাৎ করেই শুক্রবার দুপুরে দিল্লিতে গিয়ে হাজির হন। শোনা যাচ্ছে দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব মন্ত্রিসভার শপথ নেওয়ার জন্য তাকে দিল্লি আসার নির্দেশ দিয়েছে। এদিকে জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া এবং বিহারের প্রাক্তন উপমুখ্যমন্ত্রী সুশীল মোদিও এই মুহূর্তে দিল্লিতে থাকায় এই জল্পনা আরও তীব্র হয়েছে।
কয়েকদিন আগেই বিজেপির অভ্যন্তরীণ সূত্রে জানা যায় উত্তরপ্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনের আগে ঘুরে দাঁড়াতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় বড়োসড়ো পরিবর্তন করতে চলেছেন প্রধানমন্ত্রী। উল্লেখ্য সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গ সহ যে পাঁচটি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে নির্বাচন হয়েছে সেখানে বিজেপির ফল মোটেও ভালো হয়নি। অসমে তারা ক্ষমতা ধরে রাখতে পারলেও পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতা দখলের অনেক আগেই বিজেপির দৌড় থেমে যায়। তাদের আশা ছিল কেরলে ক্ষমতা দখল করতে না পারলেও প্রধান বিরোধী দল হিসেবে উঠে আসতে পারবে। কিন্তু দক্ষিণের এই রাজ্যে খাতা খুলতেই ব্যর্থ হয় বিজেপি। এই পরিস্থিতিতে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ এবং দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির কারণে গোটা দেশজুড়ে বিজেপি বিরোধী হওয়া প্রবল হয়ে উঠেছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির জনপ্রিয়তাও এই মুহূর্তে একদম তলানিতে গিয়ে পৌঁছেছে।
আরও পড়ুন
সময় কাটাতে ৭৫০০ কয়েন দিয়ে রান্নাঘর বানালেন এই মহিলা, দেখে লেগে যাবে তাক

এদিকে আগামী বছর ফেব্রুয়ারি মাসে উত্তরপ্রদেশ, পাঞ্জাব সহ বেশ কয়েকটি রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন হওয়ার কথা। উত্তরপ্রদেশে বিজেপির অবস্থা খুব একটা ভালো নয়। কয়েকদিন আগেই হয়ে যাওয়া পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিজেপিকে জোরদার ধাক্কা দিয়ে এক নম্বরে উঠে এসেছে অখিলেশ যাদবের সমাজবাদী পার্টি। স্বাভাবিকভাবেই ২০২৪ এর লোকসভা নির্বাচনে আবার জিততে হলে উত্তরপ্রদেশে বিজেপির ক্ষমতা ধরে রাখাটা অত্যন্ত জরুরী। এই পরিস্থিতিতে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব আলোচনা করে ঠিক করে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় একটা বড়সড় ঝাঁকুনি দিতে হবে।
বিজেপি সূত্রে খবর মন্ত্রিসভার রদবদলে উত্তরপ্রদেশ থেকে আরও কয়েকজনকে মন্ত্রী করা হতে পারে। এ ছাড়াও দলের অন্দরে ক্ষোভ ধামাচাপা দিতে বিভিন্ন রাজ্য থেকে আরও কয়েকজনকে মন্ত্রিসভায় নিয়ে আসতে হবে। এর পাশাপাশি প্রায় শরিক শূন্য মন্ত্রিসভায় নতুন করে শরিক দলের প্রতিনিধিদের জায়গা করে দিতে হবে বলে জানা গিয়েছে। এক সময় শোনা যাচ্ছিল বাংলা থেকেও কয়েকজনকে মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত করা হতে পারে। কিন্তু পরবর্তীকালে জানা যায় বাংলার কাউকে এক্ষুনি নতুন করে মন্ত্রিসভায় নিয়ে আসার সম্ভাবনা যথেষ্ট কম।
আরও পড়ুন
ঘোষণা হল মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার মূল্যায়ন পদ্ধতি

এদিকে বিজেপির অভ্যন্তরেও বেশ কয়েকজনকে মন্ত্রী করার চাপ আছে। কংগ্রেস ভেঙে মধ্যপ্রদেশে ঘুরপথে সরকার বিজেপি গঠন করায় মুখ্য ভূমিকা নিয়েছিলেন জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া। কিন্তু তাকে প্রতিশ্রুতি মত এখনও কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় নিয়ে আসা হয়নি। গোয়ালিয়র রাজপরিবারের এই সদস্য কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় জায়গা পাওয়ার জন্য ইতিমধ্যেই চাপ বাড়াতে শুরু করেছেন। এদিকে টানা দ্বিতীয়বার বিজেপিকে ক্ষমতায় নিয়ে এলেও অসমে সর্বানন্দ সোনোয়ালকে মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তার বদলে হিমন্ত বিশ্বশর্মা সেখানকার মুখ্যমন্ত্রী হন। স্বাভাবিকভাবেই অসমের সদ্য প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় সম্মানজনক জায়গা করে দেওয়ার চাপ আছে বিজেপির ওপর। এর পাশাপাশি বিহারের প্রাক্তন উপমুখ্যমন্ত্রী সুশীল মোদিকে কেন্দ্রের অর্থমন্ত্রী করা হতে পারে বলে জল্পনা শুরু হয়েছে।
উত্তরপ্রদেশের শরিক আপনা দল থেকে একজন এবং সদ্য গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে জীর্ণ লোক জনশক্তি পার্টির পক্ষ থেকে পশুপতি কুমার পারস ও নিতীশ কুমারের জেডি(ইউ) থেকে কয়েকজনকে মন্ত্রী করা হতে পারে বলে খবর। বিজেপির আশঙ্কা সর্বানন্দ সোনোয়ালকে দ্রুত সম্মানজনক পুনর্বাসনের ব্যবস্থা না করে দিলে তিনি দলের অভ্যন্তরে বড়োসড়ো ভাঙন ধরাতে পারেন। এই পরিস্থিতিতে কবে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় রদবদলে হবে সেটা কেবলমাত্র নরেন্দ্র মোদী এবং অমিত শাহ জানেন বলে খবর।