দেখতে দেখতে কেটে গেছে ৭৫ বছর। আজ স্বাধীনতা দিবসের প্লাটিনাম জয়ন্তী পালন করলো সারা দেশ। দেশের বীর সন্তানদের আত্মবলিদান আমাদের স্বাধীন করেছিলো আজ থেকে ৭৫ বছর আগে। তবে ইতিহাসের পাতা উল্টোলে মনে হয় এইতো সেদিনের ঘটনা সব। ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে লড়াই, রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম, জলজ্যান্ত শরীর বাড়ি থেকে বেরিয়ে লাশ হিসেবে ফিরে আসা… খুব কাঁচা ক্ষত মনে হয় এখনও। জাতীয় পতাকার দিকে তাকিয়ে থাকলে ভেসে ওঠে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের আত্মত্যাগের কথা। তাঁরা এভাবেই থেকে যাবেন আমাদের হৃদয়ে, তেরঙা পতাকায়।
প্রতি বছরই স্বাধীনতা দিবসে আমরা জাতীয় পতাকা উত্তোলন করি। লালকেল্লার মাথায় প্রথম জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন প্রধানমন্ত্রী তারপর, স্কুল, কলেজ, পাড়ার ক্লাব, নিজেদের বাড়ি সব জায়গাতেই স্বাধীনতা দিবস পালন করে আমরা জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে থাকি। তবে আমাদের ভুলে গেলে চলবে না এই পতাকা ব্যবহার করার কিছু নিয়ম আছে। যাতে অসাবধানতাবশত আমরা অপমান না করে ফেলি মহান সংগ্রামীদের আত্মত্যাগকে, সে কথা মাথায় রেখেই জাতীয় পতাকা উত্তোলনের কিছু নির্দেশিকা আছে। আসুন একে একে জেনে নেই সেই নির্দেশিকাগুলি।
আরও পড়ুন
প্রত্নতাত্ত্বিক খনন চলাকালীন হদিস মিলল প্রায় ২০০০ বছর পুরোনো ফাস্ট ফুড দোকানের

২০০২ সালের ২৬শে জানুয়ারি থেকে পরিবর্তিত হয়েছে ‘ইন্ডিয়ান ফ্ল্যাগ কোডের’ বেশকিছু নিয়মাবলী। সাধারণ মানুষ সরকারি ছুটির দিন ছাড়াও সারা বছর তাদের বাড়ি, অফিস, ফ্যাক্টরীর ছাদে তেরঙা পতাকা ব্যবহার করতে পারবে। তবে তার জন্য কিছু সীমাবদ্ধ শর্ত আছে। ইন্ডিয়ান ফ্ল্যাগ কোডের দ্বিতীয় খণ্ড অনুযায়ী সরকারী ক্ষেত্র ছাড়াও ব্যক্তিগতভাবে জনগণ তাদের বাড়ির উঠোনে জাতীয় পতাকা ওড়াতে পারবেন। কোনো অনুষ্ঠান কিংবা বিশেষ দিনে সরকারি, প্রাইভেট বিভিন্ন সংস্থা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয় পতাকা প্রদর্শন করতে পারবে। তবে সঠিক মর্যাদা এবং সম্মান জানিয়ে।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে, ছাত্রদের অনুপ্রেরণা দেওয়ার স্বার্থে পতাকা উত্তলনের সময় শপথ বাক্য পাঠ আবশ্যিক। একথা মাথায় রাখতে হবে যে, জাতীয় পতাকা কোনরকম পোশাক, আচ্ছাদন কিংবা ধর্মীয় কোনো অনুষ্ঠানে ব্যবহার করা যায় না। আবহাওয়া যেমনই থাকুক না কেনো জাতীয় পতাকা কেবল সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্তই ওপরে থাকবে। সূর্যাস্তের পর পতাকা নামিয়ে রাখতে হবে।
আরও পড়ুন
তিন বছরে প্রায় ৭০০ কোটি টন প্লাস্টিক রিসাইকেল করে নজির গড়লো ভারতের এই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা

জাতীয় পতাকা কোনোভাবেই যেনো মাটি স্পর্শ না করে সেদিকে নজর রাখতে হবে। জাতীয় পতাকা ইচ্ছাকৃতভাবে জলে ফেলা অপরাধযোগ্য। যানবাহন, জাহাজ কিংবা বিমানের ওপর ব্যবহার করা অনুচিত। বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা, রাজনৈতিক দল স্বাধীনতা দিবস পালনের সময় তাদের নিজস্ব দলীয় পতাকাও উত্তলন করে। সেক্ষত্রে নজর রাখতে হবে জাতীয় পতাকা যেনো সেই পতাকার নীচে না রাখা হয়। কোনো বস্তু এমনকি ফুল কিংবা কোনো প্রতীকও জাতীয় পতাকার ওপর ঠাঁই পাবেনা। এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণভাবে তেরঙা, কোনোরকম ব্যাজে বা ফেস্টুন ব্যবহার করা যাবে না।
স্বাধীনতা সংগ্রামীদের জায়গা শুধু তিনটি রঙের পতাকাতে নয়; প্রতিটা ভারতবাসীর মনে রয়েছে। ফলত তাদের ইচ্ছাকৃত অপমান করার কথা আমরা ভাবতে পারি না। তাছাড়া মন থেকে শ্রদ্ধাশীল হলে বাহ্যিক আচ্ছাদনের প্রয়োজন হয় না। তাই স্বাধীনতা দিবস পালন করার ক্ষেত্রে ছোটো ছোটো প্লাস্টিকের পতাকা, ব্যাজ, ফেস্টুন ইত্যাদির ব্যবহার এড়িয়ে চলা ভালো। কারণ প্লাস্টিকের পতাকা আসার পর প্রতিবছরই আমরা লক্ষ্য করে দেখেছি রাস্তায় পড়ে থাকে পতাকগুলো। যা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। স্বাধীনতার ৭৫ বছর পালনের শুভদিনে এই তথ্যগুলো মাথায় রেখে দিনটি উদযাপন করা উচিৎ আপামর ভারতবাসীর।