এই মুহূর্তে করোনা আবহেও মানুষ অন্য এক অতঙ্কে ব্যতিব্যস্ত হয়ে আছে, তার নামে যশ। হ্যাঁ, গত বছরের আম্ফানের মতো এবারও আসতে চলেছে যশ নামের এই সুপার সাইক্লোন, যার আগাম ঘোষণা করেছে আবহাওয়া দপ্তর। এই আবহাওয়া বা পরিবেশ প্রকৃতির এমন একটি বিষয় যা মানুষের দৈনন্দিন কাজকর্মকে ব্যহত করতে পারে আবার সহায়ও হতে পারে। আর এই আবহাওয়ার আগাম পূর্বাভাসের জন্য প্রতিটি রাজ্যেই রয়েছে আবহাওয়া দপ্তর, যাদের কাজ প্রকৃতির গতিপ্রকৃতির আগাম সূচনা মানুষকে জানানো, যাতে তারা সতর্ক থাকতে পারেন।আর এই আবহাওয়া নিয়েই যারা কাজ করেন তাঁরা হলেন আবহাওয়া বিজ্ঞানী।
ভারতের এমনই এক আবহাওয়া বিজ্ঞানীর নাম ড.মৃত্যুঞ্জয় মহাপাত্র, যিনি বিখ্যাত ভারতের সাইক্লোন ম্যান হিসেবে। তার এই নামের পেছনেও রয়েছে এক কারণ। তিনি ২০০৮ সাল থেকে এখনও পর্যন্ত একের পর এক ঘূর্ণিঝড়ের সঠিক পূর্বাভাস দিয়ে এসেছেন। ভারতের বিভিন্ন রাজ্যগুলি মৃত্যুঞ্জয়ের দেওয়া ফাইলিন, হুদহুদ, তিতলি, মেকুনু, ফণির মতো ঝড়ের পূর্বাভাস দেওয়ার ফলে আগাম সতর্ক হতে পেরেছিল। ভারতের এই সাইক্লোন ম্যান রাষ্ট্রপুঞ্জের তরফেও প্রশংসিত হন গত বছর মে মাসে ফণির মতো ঘূর্ণিঝড়ের আগাম পূর্বাভাস এবং তার সম্ভাব্য গতিপথ সঠিকভাবে জানান দেওয়ার কারণে। মৃত্যুঞ্জয়ের দেওয়া ফণির গতিপথের আগাম পূর্বাভাসের জন্যই আগে থেকে সতর্কতা অবলম্বন করার ফলে বহু মানুষের প্রাণহানী হওয়া আটকানো গিয়েছিল।
আরও পড়ুন
প্রথম পরমাণু বোমা তৈরির পীঠস্থান ওক রিজ শহর, ম্যানহাটন প্রজেক্টের হাত ধরে নবজন্ম হয়েছিল যে শহরের
এ ব্যাপারে মৃত্যুঞ্জয় নিজেকে নন বরং কৃতিত্ব দেন উন্নত প্রযুক্তিকে। দীর্ঘ ২৭ বছর ধরে তিনি আবহবিজ্ঞানকেই নিজের পেশা করে তুলেছেন। এই মুহূর্তে মৃত্যুঞ্জয় মহাপাত্র ভারতের আবহবিজ্ঞান বিভাগের প্রধান হিসেবেই নিজের দায়িত্ব পালন করে চলেছেন। ভারতের এই সাইক্লোন ম্যানের নেতৃত্বেই ভারতীয় আবহবিজ্ঞান দপ্তরের বিভিন্ন আঞ্চলিক বিশেষজ্ঞ শাখাগুলি ২০০৮ থেকে একের পর এক ঘূর্ণিঝড়ের সঠিক পূর্বাভাস দিয়ে আসছে। ভারত, বঙ্গপোসাগর, আরবসাগর এবং উত্তর ভারত মহাসাগরের বিভিন্ন ক্রান্তীয় এলাকার যে দেশগুলির দ্বারা ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ হয় তাদেরও প্রশংসা পেয়েছে।
পুণের আবহাওয়া দপ্তরে ১৯৯২ সালে নিজের কেরিয়ার শুরু করেন মৃত্যুঞ্জয় মহাপাত্র। এরপর তিনি ওড়িশার বালাসোরে ডিফেন্স রিসার্চ অ্যাণ্ড ডেভলপমেন্ট সংস্থাতেও কিছুদিন কাজ করেন। এরপর তিনি ভারতীয় আবহবিজ্ঞান দপ্তরের আঞ্চলিক বিশেষজ্ঞ শাখার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেন ২০০৮ সালে। আর তারপর থেকেই একের পর এক ঘূর্ণিঝড়ের সম্ভাব্য গতিপথ, তাদের বেগ এবং সময়কাল নিয়ে একের পর এক নির্ভূল গণনা করে এসেছেন।
আরও পড়ুন
প্রকৃতির নিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে এই ঝর্ণা বয়ে চলেছে নিচ থেকে উপরের দিকে
মৃত্যুঞ্জয়ের মতে ২০০৮ সালে আবহবিজ্ঞানে একের পর এক প্রযুক্তিগত উন্নতির কারণেই তিনি এতটা সাফল্য পেয়েছেন। আঞ্চলিক বিশেষজ্ঞ শাখার প্রধান হিসেবে ১১ বছরের কাজের পর ২০১৯ সালের আগষ্ট মাসে পাঁচ বছরের জন্য ভারতীয় আবহবিজ্ঞান বিভাগের প্রধান পএ নিযুক্ত করা হয় মৃত্যুঞ্জয়কে। এছাড়াও WMO-এর এক্সিকিউটিভ কাউন্সিলের সদস্য হিসেবেও তিনি ২০১৩য় নির্বাচিত হন।
মৃত্যুঞ্জয় দাবি করেছেন যে ফণি ঘূর্ণিঝড়ের সঠিক পূর্বাভাস তাদের দপ্তরের জন্য একটি বড়ো ঘটনা ছিল। কারণ দেশের বেশিরভাগ এজেন্সিই দাবি করেছিল ফণির সম্ভাব্য গতিবেশ ৩৮০ কিলোমিটার হবে কিন্তু মৃত্যুঞ্জয়ের পূর্বাভাস ছিল এই ঝড় ২২০ কিলোমিটার গতিবেগে আছড়ে পড়বে যা একদম সঠিক হয়ে দেওয়া দেয়। এরপরই মৃত্যুঞ্জয়ের মুকুটে যুক্ত হয় এক নতুন পালক।