২০ এপ্রিল, ২০২৪শনিবার

২০ এপ্রিল, ২০২৪শনিবার

প্রথম পরমাণু বোমা তৈরির পীঠস্থান ওক রিজ শহর, ম্যানহাটন প্রজেক্টের হাত ধরে নবজন্ম হয়েছিল যে শহরের

পারমাণবিক বোমা শুনলেই হিরোসিমা নাগাসাকি সহ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের একাধিক ছবি আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে। কিন্তু এই পারমাণবিক বোমা কোথায় কিভাবে প্রথম তৈরী হয়েছিল সে খবর অনেকেরই অজানা। পারমাণবিক বোমা তৈরীর জন্য যে বিশাল গবেষণামূলক কর্মকাণ্ড চলে তার পোশাকি নাম ম‍্যানহাটন প্রজেক্ট।ইউএসএ-র টেনেসির পূর্ব প্রান্তে এক রহস‍্যময় শহরের অবস্থান ছিল। উঁচু বেড়ার ওপারে সেখানে গোপনে চলতো ম‍্যানহাটন প্রজেক্টের কাজ, পৃথিবীর লোকচক্ষুর অন্তরালে। এমনকি এই শহরের ওক রিজ সিটি নামটাও ম‍্যানহাটন প্রজেক্টের সঙ্গে যুক্ত একজন কর্মীর দেওয়া।

কিন্তু পৃথিবীতে এত শহর থাকতে এই শহরকেই কেন বেছে নেওয়া হল ম‍্যানহাটন প্রজেক্টের মতো এরকম গুরুত্বপূর্ণ প্রজেক্টের জন‍্য? ১৯৪২ সালে যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের পক্ষ থেকেই এই অঞ্চলটি বেছে নেওয়া হয় পারমাণবিক বোমা প্রস্তুতির জন‍্য। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে গুরুত্বপূর্ণ ম‍্যানহাটন প্রজেক্টের মিলিটারি হেড লেসলি গ্রোভস বেশ কয়েকটি কারণ দর্শান। প্রাথমিক ভাবে স্বল্প জনসংখ্যার ফলে স্বল্প মূল্যে জমি অধিগ্রহণে সুবিধা হয় কর্তৃপক্ষের। এছাড়াও রেলপথ ও সড়কপথের সুবিধাও ছিল একটি অন‍্যতম কারণ। পাশাপাশি জল এবং বিদ‍্যুতের নিরবিচ্ছিন্ন সরবরাহ আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ ছিল।

প্রথম পরমাণু বোমা তৈরির পীঠস্থান ওক রিজ শহর, ম্যানহাটন প্রজেক্টের হাত ধরে নবজন্ম হয়েছিল যে শহরের

প্রায় ৪৪ একর জায়গা জুড়ে K 25 ইউরেনিয়াম পৃথকীকরণের সুবিধাসম্পন্ন যে বহুতলটি ছিল, সেটিকেই একসময়ে পৃথিবীর দীর্ঘতম বিল্ডিং হিসেবে গণ্য করা হতো। শুধুমাত্র ম‍্যানহাটন প্রজেক্টের কাজের উপযুক্ত বিল্ডিং ছাড়াও স্কুল, পাঠাগার এবং রেস্তোরাঁ এই শহরটিকে সম্পূর্ণতা দিয়েছিল।

১৯৪২ এর মধ‍্যেই শহরের ষাট হাজার একর জমি অধিগ্রহণ করে নেয় ইউনাইটেড স্টেটসের সেনাবাহিনী ও ইঞ্জিনিয়াররা এবং বাসিন্দাদের স্থান ত‍্যাগের নোটিশ দেওয়া হয়। এরপর ওক রিজ ব্রিজকে ঘিরে গড়ে তোলা হয় একাধিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং তড়িৎচুম্বকীয় ইউরেনিয়াম বিচ্ছিন্নকরণ কেন্দ্র। কে-২৫, এস-৫০, ওয়াই-১২ ইত‍্যাদি নামেই নামাঙ্কিত করা হতো এগুলিকে।

প্রথম পরমাণু বোমা তৈরির পীঠস্থান ওক রিজ শহর, ম্যানহাটন প্রজেক্টের হাত ধরে নবজন্ম হয়েছিল যে শহরের

ওক রিজকে যখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের গোপন ঘাঁটি বানানোর প্রস্তুতি চলছিল, ঠিক সেই সময়ে টেনেসির গভর্নর এই শহরকে সেনাবাহিনী পরিচালিত একটি শহর বানানোর প্রস্তাবনাকে নস‍্যাৎ করে দেন। কিন্তু ১৯৪৩ এ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হবার পর যথারীতি গভর্নরের এই পরিকল্পনা কার্যকর হয়নি এবং ওক রিজ শহর সম্পূর্ণ রূপে সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। আজও এই শহরের আয়ের অন‍্যতম উৎস বৈজ্ঞানিক বিকাশ। এস-৫০, কে-২৫ কেন্দ্রগুলি বর্তমানে আর না থাকলেও এক্স-১০ বর্তমানে ওক রিজ এর জাতীয় পাঠাগার।

যে শহর একসময়ে পারমাণবিক বোমার অন‍্যতম পীঠস্থান ছিল, রণকৌশল গোপন রাখতে যে শহরকে লোকচক্ষুর আড়ালে রাখতেই চেয়েছিলেন রাষ্ট্রনায়করা, সেই ওক রিজ শহর আজ নক্সভিল এর চল্লিশ কিলোমিটার পশ্চিমে দাঁড়িয়ে রয়েছে স্বমহিমায় এক টুকরো ইতিহাসের অন‍্যতম দলিল হয়ে।

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Stay Connected

7,808FansLike
20FollowersFollow

Latest Articles

error: Content is protected !!