মেঘালয়ে অবৈধ কয়লাখনির সমস্যা ক্রমশ বড়ো আকার ধারণ করছে। ২০১৮ সালে জাতীয় পরিবেশ আদালত সে রাজ্যের প্রতিটি খোলামুখ কয়লাখনি বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশ দেয়। জানিয়ে দেয় অবৈজ্ঞানিক উপায়ে মেঘালয়ে কয়লা খনি থেকে কয়লা উৎপাদন করা যাবে না। উল্লেখ্য উত্তর-পূর্ব ভারতের এই রাজ্যে ৫৬০ মিলিয়ন টন কয়লা মজুত আছে বলে বিশেষজ্ঞদের অনুমান। কিন্তু পরিবেশ আদালতের নির্দেশ সত্ত্বেও যে কাজের কাজ কিছু হয়নি তা পরিষ্কার। ৩০ মে পূর্ব জয়ন্তিয়া পার্বত্য জেলায় একটি খোলামুখ কয়লা খনিতে ব্যাপক ধস নামে। কর্মরত অবস্থায় ৫ খনি শ্রমিক চাপা পড়ে যায়। তারপর থেকে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর সহ আরও বেশ কটি রাজ্যের উদ্ধারকারীরা ওই খনি শ্রমিকদের উদ্ধার করার কাজে হাত লাগায়। শেষপর্যন্ত নৌবাহিনী উদ্ধার প্রক্রিয়ায় সামিল হয়েছে। অবশেষে মঙ্গলবার ওই খনির দু’জন শ্রমিকের মৃতদেহ নৌবাহিনী ডুবুরিরা খুঁজে পেয়েছে বলে জানিয়েছেন মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী কনরাড সাংমা।
মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন অবৈধ উপায়ে এই খোলামুখ খনিতে কাজ চলছিল। কয়লা খননের জন্য গত ৩০ মে ডিনামাইট বিস্ফোরণ ঘটানো হলে ১৫২ মিটার গভীর এই খনিতে ধ্বস নামে। তৎক্ষণাৎ ওই খনিতে কর্মরত পাঁচ শ্রমিক তলিয়ে যায়। এই ঘটনায় অবৈধ কয়লা খনিটির মালিককে ইতিমধ্যেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে। উল্লেখ্য পূর্ব জয়ন্তিয়া পার্বত্য জেলায় গত ছয় মাসে এই নিয়ে দ্বিতীয় খোলামুখ খনিতে ধ্বস নেমে শ্রমিকের মৃত্যু ঘটনা ঘটল। জানুয়ারি মাসে এরকমই একটি বেআইনি কয়লা খনিতে ধ্বস নামে। ৬ জন শ্রমিকের সলিল সমাধি ঘটেছিল তখন। তারপরও পরিস্থিতির তেমন একটা উন্নতি হয়নি। বিরোধীদের অভিযোগ মেঘালয় সরকারের সদিচ্ছার অভাবেই বারবার এরকম ঘটনা ঘটছে।
আরও পড়ুন
দেশের করোনা সংক্রমণ প্রায় একই জায়গায়, সামান্য কমল দৈনিক মৃত্যুর হার
উদ্ধার কাজের সঙ্গে যুক্ত সদস্যরা পরিষ্কার জানিয়েছেন বাকি তিনজন শ্রমিকের বেঁচে থাকার কোনও আশা নেই। এমনকি তাদের দেহ শেষ পর্যন্ত উদ্ধার করা সম্ভব হবে কিনা তা নিয়েও তারা সংশয় প্রকাশ করেছেন। তারা জানিয়েছেন ওই খনির জলের স্তর অন্তত আরও ১০ মিটার না নামলে উদ্ধারকাজ চালিয়ে যাওয়া যথেষ্ট কঠিন হবে। এদিকে মেঘালয়ে বর্ষার ঢুকে পড়ায় উদ্ধার প্রক্রিয়া বারবার ব্যাহত হচ্ছে।
২০১৪ সালে জাতীয় পরিবেশ আদালত পরিষ্কার জানিয়ে দেয় মেঘালয় কয়লার বিপুল পরিমাণ মজুত ভান্ডার থাকলেও সেখানকার ভূ-প্রকৃতিগত বৈশিষ্ট্যের কারণে খনন কাজ চালিয়ে যাওয়া ঠিক হবে না। তাতে যেমন পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হবে তেমনই যখন-তখন বিপর্যয় ঘটার সম্ভাবনা আছে। কার্যত দেখা গিয়েছে আদালতের এই নির্দেশ তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়ে সে রাজ্যের কয়লা মাফিয়ারা বিভিন্ন খোলামুখ খনির খননকার্য অবাধে চালিয়ে যাচ্ছে। বারবার অভিযোগ উঠেছে শাসকদলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার কারণেই সেখানকার কয়লা মাফিয়ারা এই দুঃসাহস দেখাতে পারছে। এর আগে ২০১৮ সালে পূর্ব জয়ন্তিয়া পার্বত্য জেলায় এরকমই একটি খোলামুখ খনিতে ধ্বসে ১৫ জন শ্রমিকের সলিল সমাধি ঘটে। এই শ্রমিকেরা প্রত্যেকেই অসম থেকে সেখানে কাজ করতে এসেছিল।