পৃথিবীর বহু দেশের মত মিশরেও পুরুষদের থেকে মহিলাদের দুর্বল বলে মনে করা হয়। এমনকি পুরুষরা জীবিকা নির্বাহের জন্য যে কাজগুলিকে পেশা হিসেবে বেছে নিতে পারে তার অনেকগুলি করার অধিকার নেই মিশরীয় মহিলাদের। বিশেষ করে সেই দেশে অল্প বয়সে কেউ বিধবা হলে তাকে সমাজের চাপে একপ্রকার বাধ্য হয়েই দ্বিতীয় বিয়ে করতে হয়। কিন্তু অত্যন্ত অল্প বয়সে সিসার স্বামী মারা গেলেও তিনি বিয়ে করতে চাননি। বরং নিজের একমাত্র কন্যা সন্তানকে বড়ো করে তোলাটাই ছিল তার কাছে জীবনের প্রধান লক্ষ্য।
কিন্তু বিধবা হয়ে মেয়েকে বড়ো করে তুলতে হলে অর্থের প্রয়োজন। অথচ অর্থ উপার্জনের বেশিরভাগ কাজগুলি সিসার করার অধিকার ছিল না। কারণ মিশরের সমাজ মনে করে মেয়েরা সব কিছু করতে পারে না, তার জন্য পুরুষদের উপস্থিতি অত্যন্ত জরুরী। এখানেই একটি ব্যতিক্রমী পদক্ষেপ নেন সিসা। তিনি ঠিক করেন পুরুষের পরিচয়ে বাঁচবেন। এর জন্য গত ৪৩ বছর ধরে পুরুষদের মত মাথায় পাগড়ী বাঁধার পাশাপাশি ঢিলেঢালা পোশাক পরেন তিনি।
আরও পড়ুন
কাঠের পাটাতনের নিচে লুকিয়ে থাকা পাহাড়ি সিংহকে বনবিড়াল ভেবে বসলেন মার্কিন মহিলা! তারপর কি হল?
পাড়া-প্রতিবেশীদের কাছেও নিজেকে পুরুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হওয়ায় জীবিকা অর্জনের পথে আর কোনও সমস্যা হয়নি। এইভাবেই নিজের মেয়েকে তিনি বড়ো করে তুলেছেন। অবশ্য পরিবার-পরিজনরা তাকে যে বিয়ে করে নতুন করে সংসার পাততে বলেননি তা নয়। বরং একটা সময় পর্যন্ত তারা নিয়মিত ভিত্তিতে তাকে চাপ দিত যাতে তিনি নতুন করে সংসার বাঁধেন। কিন্তু মেয়েকে বড়ো করার জন্য পুরুষের পরিচয়েই বেঁচে থাকার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। বর্তমানে সিসার বয়স ৮৫ বছর। আসলে নিজের মাতৃত্ববোধকে চূড়ান্ত পর্যায়ে তুলে নিয়ে যেতে তিনি এই পুরুষ পরিচয় গ্রহণ করেছিলেন। কারণ এটা সকলে জানে মায়ের চেয়ে বড় ত্যাগী আর কেউ হতে পারে না। সম্প্রতি তার এই আত্মত্যাগের কথা লোকমুখে প্রচারিত হলে সিসাকে মিশর সরকার দেশের সর্বশ্রেষ্ঠ মায়ের স্বীকৃতি দিয়েছে।