নেপালের রাজনৈতিক সঙ্কট শেষ পর্যন্ত বিচারবিভাগীয় সঙ্কটে পরিণত হল। যদিও সে দেশের প্রধান বিচারপতি চোলেন্দ্র শামসের রানা’র তৎপরতায় সেই সঙ্কট আপাতত সামাল দেওয়া গিয়েছে। সে দেশের সংসদের নিম্নকক্ষ ভেঙে দেওয়া নিয়ে রাষ্ট্রপতির সিদ্ধান্ত অসাংবিধানিক কিনা তা বিচার করার জন্য পাঁচ সদস্যের নতুন সাংবিধানিক বেঞ্চ গঠন করেছে নেপাল সুপ্রিম কোর্ট। এই সাংবিধানিক বেঞ্চের ওপরেই নেপালের রাজনৈতিক ভবিষ্যত নির্ভর করছে। উল্লেখ্য গত পাঁচ মাসের মধ্যে এই নিয়ে দ্বিতীয় বার নেপালের রাজনৈতিক সঙ্কটের জন্য সে দেশের সুপ্রিম কোর্ট সাংবিধানিক বেঞ্চ গঠন করলো।
গত ২২ মে নেপালের তদারকি প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি’র সুপারিশের ভিত্তিতে রাষ্ট্রপতি বিদ্যাদেবী ভান্ডারী সংসদের নিম্নকক্ষ ভেঙে দেন। ঘোষণা করেন নভেম্বর মাসের ১২ ও ১৯ তারিখ নেপালের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এরপরই নেপালী কংগ্রেস সহ অন্যান্য বিরোধী রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের করা হয়। দেশের প্রধান পাঁচটি বিরোধী দলের জোট দাবি করে নতুন সরকার গড়ার সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও রাষ্ট্রপতি সংসদের নিম্ন কক্ষ ভেঙে দিয়ে অসাংবিধানিক কাজ করেছেন। এই নিয়ে মোট ৩০ টি পিটিশন জমা পড়ে নেপাল সুপ্রিম কোর্টে।
নেপালের প্রধান বিচারপতি চোলেন্দ্র শামসের রানা আগেই জানিয়েছিলেন দেশের রাজনৈতিক সঙ্কট মেটাতে সাংবিধানিক বেঞ্চ গঠন করা হবে। সেইমতো শনিবার পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চ গঠন করা হয়। কিন্তু ওই সাংবিধানিক বেঞ্চের দু’জন বিচারপতি তেজ বাহাদুর কেসি এবং বাম কুমার শ্রেষ্ঠার মনোনয়ন নিয়ে প্রশ্ন তোলে বিরোধীরা নেপালী কংগ্রেসের সভাপতি শের বাহাদুর দেউবা। তিনি অভিযোগ করেন এর আগে নেপালী কমিউনিস্ট পার্টির অন্তর্বর্তী দ্বন্দ্বের মীমাংসা করতে গিয়ে এই দুই বিচারপতি পক্ষপাতমূলক রায় দিয়েছেন। তাই এরা সাংবিধানিক বেঞ্চে থাকলে রায়দান কখনোই নিরপেক্ষ হবে না বলে দাবি করা হয়।
আরও পড়ুন
পরিবেশ দিবসের দিন অভিনব উদ্যোগ মধ্যপ্রদেশের, বাড়ি তৈরি করতে গেলেই একটি গাছ লাগাতে হবে
সাংবিধানিক বেঞ্চের অন্যতম দুই সদস্যের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ ওঠায় ব্যাপক সমস্যায় পড়ে যায় নেপাল সুপ্রিম কোর্ট। শেষ পর্যন্ত রবিবার সে দেশের প্রধান বিচারপতি চোলেন্দ্র শামসের রানা সংশ্লিষ্ট দুই বিচারপতিকে বাদ দিয়ে নতুন করে পাঁচ সদস্যের সাংবিধানিক বেঞ্চ গঠন করেন। নয়া গঠিত সাংবিধানিক বেঞ্চের সদস্যরা হলেন বিচারপতি দীপক কুমার কারকি, আনন্দমোহন ভট্টরাই, মীরা ধুঙ্গানা, ঈশ্বর প্রসাদ খাতিওয়ারা এবং প্রধান বিচারপতি চোলেন্দ্র শামসের রানা।
উল্লেখ্য এর আগে গত বছর ২০ ডিসেম্বর ফের একবার নেপালের সংসদের নিম্ন কক্ষ ভেঙে দিয়েছিলেন রাষ্ট্রপতি বিদ্যাদেবী ভান্ডারী। সেবারেও দেশের বিরোধী পক্ষ সর্বোচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হলে নেপালের সাংবিধানিক বেঞ্চ রাষ্ট্রপতির সিদ্ধান্তকে অসাংবিধানিক হিসেবে চিহ্নিত করে। এই নিয়ে দ্বিতীয়বার নেপালের রাষ্ট্রপতি সংসদের নিম্নকক্ষ ভেঙে দেওয়ায় সে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি রীতিমতো টালমাটাল। এখন নেপাল সুপ্রিম কোর্টের রায়ের ওপর সমস্তটা নির্ভর করছে।