৩ জুন, ২০২৩শনিবার

৩ জুন, ২০২৩শনিবার

১৫ আগষ্ট নয় পশ্চিমবঙ্গের এই অঞ্চলে ১৮ আগস্ট পালিত হয় স্বাধীনতা দিবস, জানুন অজানা ইতিহাস

পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার একটি সীমান্তবর্তী গ্রাম, শিবনিবাস। এক সময় নদীয়া রাজ পরিবারের রাজধানী ছিলো গ্রামটি। অষ্টাদশ শতাব্দীতে মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র এই রাজধানী নির্মাণ করেন। সে যুগে দেশের নানা প্রান্ত থেকে শরণার্থীরা আসতেন এই গ্রামের ঐতিহ্যবাহী মন্দির দর্শন করতে। বর্তমানে খুব একটা বেশী চর্চা হয় না শিবনিবাস গ্রাম নিয়ে। মাথাভাঙ্গা নদীর শাখানদী চূর্ণী, শিবনিবাস গ্রামের মধ্য দিয়ে নদীয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে প্রবাহিত হয়েছে। তবে এই অঞ্চলে ভারত বাংলাদেশ সীমান্তের মাঝখান দিয়েই বয়ে গেছে চূর্ণী নদী।

 

শিবনিবাস গ্রাম ঘিরে ঐতিহাসিক কিছু ঘটনা কালের নিয়মে ইতিহাসের পাতা থেকে হারিয়ে গেছে। তবে আজ সারা দেশে যখন ১৫ আগস্ট স্বাধীনতা দিবস উদযাপিত হয়েছে, সেই সময় শিবনিবাস এবং তার পার্শ্ববর্তী কিছু অঞ্চল ১৮ আগস্টের অপেক্ষায় আছে স্বাধীনতা দিবস পালনের জন্য।

আরও পড়ুন
 প্রত্নতাত্ত্বিক খনন চলাকালীন হদিস মিলল প্রায় ২০০০ বছর পুরোনো ফাস্ট ফুড দোকানের

১৫ আগষ্ট নয় পশ্চিমবঙ্গের এই অঞ্চলে ১৮ আগস্ট পালিত হয় স্বাধীনতা দিবস, জানুন অজানা ইতিহাস

প্রায় দু’শো বছরের অপেক্ষার অবসান ঘটে ১৯৪৭ সালের ১২ আগস্ট। লর্ড মাউন্টব্যাটেন ঘোষণা করেন ১৫ আগস্ট ভারতকে স্বাধীনতা দেওয়া হবে। কিন্তু সমস্যা দেখা দেয় অন্য জায়গায়। সীমানা নির্ধারণের সময় ব্রিটিশ অফিসার র‍্যাডফ্লিক মালদা এবং নদীয়ার বেশ কিছু অঞ্চল পূর্ব পাকিস্তান অর্থাৎ বর্তমানে বাংলাদেশের অধীনে অন্তর্ভুক্ত করেন। এই এলাকাগুলো হিন্দু অধ্যুষিত অঞ্চল হওয়ায় গ্রামবাসীর তীব্র প্রতিবাদ জানায়।

 

শিবনিবাস গ্রামের বাসিন্দা ইতিহাসবিদ অঞ্জন সুকুল এই ঘটনা নিয়ে গবেষণা করেন। স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলার ইতিহাসে এই ঘটনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলো। সুকুলবাবু জানান, “নদীয়া তৎকালীন সময়ে পাঁচটি মহাকুসুম বা মহকুমায় বিভক্ত ছিলো। সেগুলি হল রানাঘাট, কৃষ্ণনগর, মেহেরপুর, চৌডাঙ্গা এবং কুশিটা। যার মধ্যে শেষের তিন মহকুমা বর্তমানে বাংলাদেশের অন্তর্গত। বেশিরভাগ অঞ্চলেই হিন্দু জনসংখ্যা বেশী থাকায় তারা প্রাণহানী, সম্পত্তি লুট এবং উচ্ছেদ হওয়ার ভয়ে প্রতিবাদ শুরু করে। কারণ তৎকালীন রাজনৈতিক পরিস্থিতি খুবই উদ্বেগজনক ছিলো এবং এই অঞ্চলগুলিতে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগত প্রায়শই।” 

আরও পড়ুন
বিদেশের মাটিতে প্রথম ভারতীয় পতাকা উত্তলন করেছিলেন এক মহিলা! জেনে নিন কে তিনি

১৫ আগষ্ট নয় পশ্চিমবঙ্গের এই অঞ্চলে ১৮ আগস্ট পালিত হয় স্বাধীনতা দিবস, জানুন অজানা ইতিহাস

শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জীর মতো কিছু রাজনীতিবিদ এই নিয়ে মাউন্টব্যাটেনের সঙ্গে আলোচনায় বসেন। প্রতিবাদের আগুনে উত্তপ্ত পরিবেশ দেখে তৎক্ষণাৎ এই অঞ্চলগুলোকে ভারতের মানচিত্রের অন্তর্ভূক্ত করার আদেশ দেওয়া হয়। এসবের মধ্যেই মুসলিম লীগের নেতারা কৃষ্ণনগর রাজবাড়ীর কাছে কৃষ্ণনগর পাঠাগারে পাকিস্তানের পতাকা উত্তলন করেন। এই ব্যাপারে অঞ্জন সুকুল বলেন, “তিনদিন পর ১৭ আগস্টের রাতে নতুনভাবে মানচিত্র আঁকা হয়, যেখানে হিন্দু অধ্যুষিত অঞ্চল ভারতের মধ্যে এবং মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চল পূর্ব পাকিস্তানের মধ্যে যুক্ত করা করা হয়। পাকিস্তানের পতাকা নামিয়ে ভারতের পতাকা উত্তলন করা হয় আগস্টের ১৮ তারিখে।”

 

ইতিহাসে এই তাৎপর্যপূর্ণ দিনটি স্মরণীয় করে রাখতে গ্রামবাসীরা ১৮ আগস্ট স্বাধীনতা দিবস পালন করেন। “আমি এ বিষয়ে জানতে পারি আমার দাদু , বিপ্লবী প্রমথনাথ সুকুলের কাছ থেকে। আমরা ১৮ আগস্ট স্বাধীনতা অর্জন করেছিলাম। তাই আমার মনে প্ৰশ্ন জাগে আমরা যদি সত্যিই ওই দিন স্বাধীনতা অর্জন করে থাকি, তাহলে ওইদিনই স্বাধীনতা দিবস পালন করবো না কেনো?” ১৮ আগষ্ট স্বাধীনতা দিবস পালনের যুক্তি দেন সুকুলবাবু। 

আরও পড়ুন
উত্তোলনের সময় অজান্তেই অপমান করছি না তো জাতীয় পতাকার! স্বাধীনতার ৭৫ বছরে জানুন জাতীয় পতাকা সম্পর্কিত নিয়মাবলী

১৫ আগষ্ট নয় পশ্চিমবঙ্গের এই অঞ্চলে ১৮ আগস্ট পালিত হয় স্বাধীনতা দিবস, জানুন অজানা ইতিহাস

১৮ আগষ্ট স্বাধীনতা দিবস পালনকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য সুকুলবাবু দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ছিলেন। ‘নদীয়ার স্বাধীনতা’ নামক একটা জীর্ণ বই খুঁজে পাওয়ার পর এই দাবী নিয়ে তিনি রাইটার্স বিল্ডিং পর্যন্ত ছুটে গেছেন। বাংলার তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী এই আবেদন খারিজ করায় তিনি ১৯৯১ সালে প্রধানমন্ত্রী নারশিমা রাওয়ের সঙ্গেও দেখা করেন।

 

সুকুলবাবুর এই প্রচেষ্টার কারণে শুধু নদীয়া নয়, উত্তর চব্বিশ পরগণার বনগাঁ অঞ্চলেও ১৮ আগস্ট এবং ১৫ আগস্ট দু’দিন স্বাধীনতা দিবস পালিত হয়। ১৯৯৮ সাল থেকে চলে আসছে এই দু’দিন ধরে স্বাধীনতা দিবস উদযাপন।

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Stay Connected

7,808FansLike
20FollowersFollow

Latest Articles

error: Content is protected !!