কর্নাটকের শিমোগা জেলার মাত্তু গ্রামের নাম হয়ত আজ অনেকে জানেন। যদি নামটা ভুলে গিয়েও থাকেন তবে এই গ্রামের পরিচয় তুলে ধরলে ঠিক বুঝতে পারবেন। কারণ এটাই ভারতের একমাত্র গ্রাম যেখানে সকল বাসিন্দারা আজও সংস্কৃত ভাষায় কথা বলেন। শুধু তাই নয় তারা লেখাপড়াও সংস্কৃত ভাষাতেই করে থাকেন। কিন্তু এবার সামনে এলো দেশের একমাত্র সংস্কৃত ভাষী আইনজীবীর নাম। বেনারসের আচার্য শ্যাম উপাধ্যায় আদালতে সংস্কৃত ভাষাতেই নিজের মক্কেলদের হয়ে সওয়াল করেন!
কর্নাটকের মাত্তুর গ্রামের মানুষ যেমন সংস্কৃত ভাষা ও বৈদিক রীতিকে বাঁচিয়ে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তেমনই আচার্য শ্যাম উপাধ্যায় সংস্কৃত ভাষার অস্তিত্ব ধরে রাখার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। হিন্দি ও ইংরেজি ভাষায় সমান সাবলীল হলেও আজও পর্যন্ত একদিনের জন্য তিনি সংস্কৃত ছেড়ে অন্য ভাষায় আদালতকক্ষে সওয়াল করেননি। আজীবনের পণ করেছেন যে আদালত কক্ষে সংস্কৃত ভাষাকে তুলে ধরার চেষ্টা করবেন সবসময়।
আরও পড়ুন
পাক সীমান্তের গুরুত্বপূর্ণ চেক পয়েন্ট তালিবানদের দখলে
১৯৭৮ সালে বেনারসের হরিশচন্দ্র কলেজ থেকে এই ব্যক্তি আইনের ডিগ্রী লাভ করেন। কিন্তু তাৎপর্যপূর্ণভাবে তিনি যাবতীয় পরীক্ষা সংস্কৃত ভাষাতেই দিয়েছিলেন। ওই বছর থেকেই তিনি আইন ব্যবসাকে পেশা হিসেবে বেছে নেন। সেই থেকে সংস্কৃত ভাষায় নিজের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে প্রথমে তিনি বৌদ্ধ দর্শন শাস্ত্র নিয়ে স্নাতক হয়েছিলেন সম্পূর্ণানন্দ সংস্কৃত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। এরপর বেশ কিছুদিন শিক্ষকতার চাকরি করেছে। কিন্তু সেটি মনে না ধরায় আইন পড়ার সিদ্ধান্ত নেন।
যদিও সংস্কৃতে পন্ডিত তার বাবা আইন পড়ার আগে সাবধান করে দিয়ে বলেছিলেন, “দেশের কোনও আদালত সংস্কৃতে সওয়াল-জবাব চালানোর অনুমতি দেবে না।” বাবার এই কথাটি আচার্য শ্যাম উপাধ্যায়ের জেদ আরও বাড়িয়ে দেয়। তিনি ঠিক করেন সংস্কৃত ভাষাতেই আইনজীবী হিসেবে নিজের দায়িত্ব পালন করবেন। যেমন ভাবা তেমন কাজ। শেষ পর্যন্ত তিনি নিজের লক্ষ্যে সফল হলেন তাই নয়, আজও একইরকমভাবে সংস্কৃত ভাষায় আদালতকক্ষে দাঁড়িয়ে সওয়াল-জবাব চালিয়ে যাচ্ছেন।
আরও পড়ুন
একসময়ের ডব্লু ডব্লু ই চ্যাম্পিয়ন বর্তমানে একজন কসাই!
জানা গিয়েছে গোটা দেশের মধ্যে একমাত্র তিনিই সংস্কৃত ভাষায় মক্কেলদের হয়ে আদালতে দাঁড়িয়ে সওয়াল করেন। এমনিতেই সংস্কৃত ভাষায় খুব অল্প সংখ্যক মানুষ কথা বলেন। তার উপর আদালতে দাঁড়িয়ে সওয়াল প্রায় একরকমের অসম্ভব ব্যাপার। কিন্তু আচার্য শ্যাম উপাধ্যায় সেই অসম্ভবকেই আজ সম্ভব করে তুলেছেন।