১৯ এপ্রিল, ২০২৪শুক্রবার

১৯ এপ্রিল, ২০২৪শুক্রবার

নিষ্ঠুর জাগুয়ার বাহিনীর সদস্য হওয়ার মাধ্যমে সমাজে অভিজাত হওয়ার স্বীকৃতি পাওয়া যেত এই সাম্রাজ্যে

মূল সেনাবাহিনীর মধ্যেই কিছু দুর্ধর্ষ যোদ্ধাকে নিয়ে এলিট ফোর্স বা স্পেশাল ফোর্স গড়ে তোলার ঘটনা অতীত থেকেই চলে আসছে, যা বর্তমান সময়েও বজায় আছে। এই বিশেষ বাহিনীগুলি মূলত জরুরী কোনো অভিযান চালাতে বা শত্রু পক্ষের ওপর জোরদার আঘাত আনতে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। ভারতের মার্কোস এরকম একটি স্পেশাল ফোর্স। অতীতে মধ্য আমেরিকার অ্যাজটেক সাম্রাজ্যেও রকমই একটি বিশেষ বাহিনী ছিল ‘জাগুয়ার’।

১৩২৫ সালে বর্তমান মেক্সিকোর মধ্যাঞ্চলে গড়ে ওঠে অ্যাজটেক সাম্রাজ্য। প্রথমদিকে অ্যাজটেক সাম্রাজ্যে বিশেষ একটা প্রাচুর্য ছিল না। কিন্তু এটি গোড়া থেকেই যুদ্ধকে মূল হাতিয়ার করে এগোতে থাকে। তারা দ্রুত বুঝে যায় সাম্রাজ্যে প্রাচুর্য না থাকলেও অন্যান্য রাজাদের যদি যুদ্ধে পরাজিত করা যায়, তাহলে সেখান থেকে যে বিপুল পরিমাণ সম্পদ লুট করে নিয়ে আসা যাবে তা দিয়ে নিজেরাই একটি সমৃদ্ধশালী সাম্রাজ্য গড়ে তুলতে পারবে।

যেমন ভাবা তেমন কাজ, যুদ্ধনীতির সাহায্যে খুব দ্রুত একটি সমৃদ্ধশালী সাম্রাজ্য গড়ে তুলতে সক্ষম হয় অ্যাজটেকরা। কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে যুদ্ধনীতিকে আশ্রয় করে এই সাম্রাজ্য গড়ে উঠলেও এখানে কোনো স্থায়ী সেনাবাহিনী সেভাবে ছিল না। তাই এখানকার সমস্ত পুরুষকেই বাধ্যতামূলকভাবে যুদ্ধের প্রশিক্ষণ নিয়ে রাখতে হত, যাতে যুদ্ধের সময় প্রয়োজন অনুযায়ী তাদের ব্যবহার করতে পারে শাসকরা।

অ্যাজটেক সাম্রাজ্যের সমস্ত পুরুষকে সামরিক প্রশিক্ষণ নিয়ে রাখতে হত। কিন্তু অভিজাতদের ক্ষেত্রে এই সামরিক প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক ছিল না। মূলত যে অভিজাতরা যুদ্ধের প্রতি আকৃষ্ট থাকত, তারাই সামরিক প্রশিক্ষণ নিতেন। কিন্তু সমাজের পিছিয়ে পড়া শ্রেণী, অর্থাৎ সাধারণ মানুষ-কৃষক-শ্রমিকরা বাধ্য হত সামরিক প্রশিক্ষণ নিতে এবং যুদ্ধে যেতে। মাত্র ১৫ বছর বয়সে যুদ্ধবিদ্যা শেখার জন্য অ্যাজটেক সাম্রাজ্যের প্রতিটি বালককে স্কুলে ভর্তি হতে হতো। এই স্কুলগুলিতে মূলত সামরিক শিক্ষা দেয়া হত। তবে সাধারণ পড়াশুনার জন্য একটি আলাদা স্কুল ছিল, অন্যদিকে অভিজাতদের ইচ্ছুক সন্তানরা যাতে যুদ্ধ বিদ্যা শিখতে পারে তার জন্য আলাদা একটি স্কুলও গড়ে তোলা হয়।

প্রাচীনকাল থেকেই মধ্য আমেরিকায় অন্যতম হিংস্র ও ধূর্ত প্রাণী হিসেবে জাগুয়ার পরিচিত। এটি বাঘ প্রজাতির প্রাণী। অ্যাজটেক অভিজাতদের ক্ষেত্রে সামরিক প্রশিক্ষণ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ না হলেও যে অভিজাতরা প্রশিক্ষণের পর সুদক্ষ যোদ্ধা হিসাবে পরিচিতি লাভ করত তাদের নিয়ে একটি স্থায়ী সেনাবাহিনী গড়ে তোলা হয়। জাগুয়ার নামে পরিচিত এই স্থায়ী বাহিনীর সদস্যরা যুদ্ধক্ষেত্রে অত্যন্ত ভয়ঙ্কর ছিল। এরা যুদ্ধের পাশাপাশি সাম্রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার কাজেও সাহায্য করত।

অ্যাজটেক সাম্রাজ্যের সাধারণ মানুষরা সারা জীবন পিছিয়ে পড়া হিসাবে থেকে গেলেও কেবলমাত্র যুদ্ধের মাধ্যমেই তারা অভিজাতের মর্যাদা ও স্বীকৃতি লাভ করতে পারত। যে সাধারণ যোদ্ধারা যুদ্ধক্ষেত্রে বিপুল বিক্রম দেখাতে পারত তাদেরকে জাগুয়ার বাহিনীর অন্তর্ভুক্ত করা হত। এই বাহিনীর সদস্য হতে পারলেই সাধারণ মানুষরা রাজার নেক নজরে পড়ে অভিজাতের স্বীকৃতি পেতেন।

অ্যাজটেক সাম্রাজ্যে যুদ্ধের সময় বিপক্ষের আটক মানুষদের দাস হিসাবে খাটান হত। আবার অনেক সময় তাদের ধরে এনে দেবতার উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করা হত। তাই যুদ্ধক্ষেত্র থেকে জীবন্ত মানুষকে ধরে আনার বিষয়টি একসময় অত্যন্ত গুরুত্ব পায়। সাধারণ সৈন্যরা জাগুয়ার বাহিনীতে সামিল হওয়ার জন্য চেষ্টা করত, যুদ্ধক্ষেত্র থেকে জীবিত মানুষ ধরে আনা ছিল সেই চেষ্টার ফল। কোনো সাধারণ সৈন্য যদি চারজন বিপক্ষের সৈন্যকে জীবিত অবস্থায় আটক করতে পারত তবে সে জাগুয়ার বাহিনীর সদস্যে পরিণত হত।

নিষ্ঠুর জাগুয়ার বাহিনীর মতো আরেকটি বিশেষ বাহিনী ছিল অ্যাজটেক সাম্রাজ্যে, এটিকে বলা হত ঈগল। জাগুয়ার বাহিনীর সদস্যরা অ্যাজটেক সাম্রাজ্যকে স্পেনীয়দের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য বীর বিক্রমে লড়াই করে। যদিও পরের দিকে স্পেনীয়দের অত্যাধুনিক অস্ত্রের সামনে পড়ে তারা হার স্বীকার করেছিল। জাগুয়ার বাহিনীর নিষ্ঠুরতার অন্যতম পরিচয় ছিল এদের হাতের কড়ুল। বিশেষভাবে তৈরি এই কুড়ুলের সাহায্যে তারা একটি তাগড়াই ঘোড়াকে পর্যন্ত এক ঘায়ে মেরে ফেলতে পারত! অনেক ঐতিহাসিক মনে করেন অ্যাজটেক সাম্রাজ্যের অস্তিত্ব রক্ষার ক্ষেত্রে জাগুয়ার বাহিনী হয়ে দাঁড়িয়েছিল মূল কারণ। এই অনুমান খুব একটা ভুল নয়, স্পেনীয়দের আগে আশেপাশের অনেক রাজ্যই অ্যাজটেকদের সঙ্গে যুদ্ধে কেবলমাত্র পরাজিত হয়নি, তারা সম্পূর্ণভাবে ধুলিস্যাৎ হয়ে গিয়েছিল।

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Stay Connected

7,808FansLike
20FollowersFollow

Latest Articles

error: Content is protected !!