৩ জুন, ২০২৩শনিবার

৩ জুন, ২০২৩শনিবার

আফগানিস্তানে শিখদের অবস্থান সমস্যা আর নেমে আসা নানা আক্রমণ- ফিরে দেখা ইতিহাস

ভারত ইতিমধ্যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে আফিগানিস্থানে আটকে থাকা ভারতীয় এবং আফগান শিখদের ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করা হবে। ইতিহাসের পাতা উল্টালে দেখা যায় পৃথিবীর অনেক দেশেই সংখ্যালঘু মানুষদের ওপর আক্রমণ নেমে এসেছে। তালিবানদের ক্ষমতা দখলের চেষ্টায় আফিগানিস্থানে হিংসা এবং আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। ফলত অনুমান করাই যায় দেশের সংখ্যালঘুদের ওপর কী পরিমাণ অত্যাচারের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এসবের আগেও গতবছর আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলের একটি শিখ-হিন্দু মন্দিরে হামলা চালিয়ে ৬ বছর বয়সি এক শিশুসহ ২৫ জনকে হত্যা করা হয়৷ পরে হামলার দায় স্বীকার করে জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট৷ জঙ্গীদের গতিবিধির ওপর নজর রাখা সাইট ইন্টেলিজেন্স গ্রুপ এমনটাই জানিয়েছে। পাকিস্তানের ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি আইএসআই- এর হাত আছে এর পেছনে এমনটাও অনুমান করছেন অনেকে।

 

ওই হামলাটি এমন এক সময় চালানো হয়েছিল যখন আফগান শান্তি চুক্তির আলোচনার অংশ হিসেবে বন্দি বিনিময় নিয়ে তালিবানের সঙ্গে দেশের সরকারের একটি মুখোমুখি বৈঠক হবার কথা চলছিল। এছাড়া ঠিক একদিন আগেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানে আর্থিক সাহায্যের পরিমাণ এক বিলিয়ন ডলার (আট হাজার কোটি টাকা) কমানো হবে এমনটা ঘোষণা করে।

আরও পড়ুন
ছোবল মেরেছিল সাপ, প্রতিশোধ নিতে সাপকেই কামড়ে মেরে ফেললেন এই ব্যক্তি

আফগানিস্তানে শিখদের অবস্থান সমস্যা আর নেমে আসা নানা আক্রমণ- ফিরে দেখা ইতিহাস

তবে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ আফগানিস্তানে শিখ ও হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষদের ওপর হামলা নতুন নয়৷ ২০১৮ সালে আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলের শহর জালালাবাদে আত্মঘাতী বোমা হামলা চালিয়ে ১৯ জন শিখকে হত্যা করা হয়৷ শিখরা তখন প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনির সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছিলেন৷ পরবর্তীতে সেই হামলারও দায় স্বীকার করে আইএস৷

 

আশির দশকে সোভিয়েত- আফগান যুদ্ধের সময় বহু শিখ ধর্মাবলম্বী মানুষ পৃথিবীর ৯০ শতাংশ শিখের বাসস্থান ভারতে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়। এরপর নব্বইয়ের দশকে, বিশেষ করে নজিবুল্লাহর পতনের পর ব্যাপক হারে তারা আফগানিস্তান ছাড়েন৷ এরপর তালিবানরা ক্রমশ শক্তিশালী হয়ে ওঠে। এবং তারা পুরো দেশজুড়ে শিখদের ওপর অত্যাচার শুরু করে। অধিকাংশ গুরুদুয়ারা ভেঙ্গে ফেলা হয়৷ যেখানে ৯০ দশকের আগে আফগানিস্তানে শিখ জনসংখ্যা ছিল ৫০ হাজারেরও বেশি, সেখানে এখন মাত্র কয়েক হাজার শিখের বসবাস রয়েছে।

 

এছাড়া তালিবানরা শিখদের ওপর নানা বিধিনিষেধ আরোপ করে৷ তাদের হলুদ বাহুবন্ধনী পরতে বলা হয়, যাতে চিহ্নিত করা যায় যে তারা মুসলিম নয়। শিখদের মৃতের শরীর পোড়ানোর ওপরও নিষেধাজ্ঞা জারী করা হয়৷ পরবর্তীতে তালিবান সরকারের পতনের পরও শিখরা তাদের ধর্ম মতে শেষকৃত্য পালন করতে গিয়ে অনেক জায়গায় স্থানীয় মুসলিমদের বাধার সন্মুখীন হন৷ ২০০৩ সালে তারা আফগান সরকারের কাছে মৃত শরীর পোড়ানোর জায়গার আবেদন করলে ২০০৬ সাল নাগাদ সরকার তাদের পুরোনো জায়গাগুলো ফেরত দেয়৷ কিন্তু এরপরও তারা স্থানীয়দের হামলার শিকার হয়েছেন৷

আরও পড়ুন
রাজবাড়ির পাশেই পাওয়া গেলো গোপন সুড়ঙ্গ, গুপ্তধনের আশায় চাঞ্চল্য ছড়াল গ্রামবাসীদের মধ্যে

আফগানিস্তানে শিখদের অবস্থান সমস্যা আর নেমে আসা নানা আক্রমণ- ফিরে দেখা ইতিহাস

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য দুই ধর্মের মানুষের মধ্যে সহাবস্থানের উদাহরণও রয়েছে৷ এমনকি ধর্মীয় বিশ্বাস ও আচারেও কিছু কিছু জায়গায় মিল রয়েছে৷ মৃতকে কেমন করে সৎকার করা হবে, এই ব্যাপারে শিখ এবং ইসলাম ধর্মের মধ্যে তফাৎ থাকলেও এই দুই ধর্মের মধ্যে অনেক বিষয়েই মিল রয়েছে৷ অনেক ধর্মতত্ত্ববিদ মনে করেন, শিখ ধর্ম আসলে ইসলাম ধর্ম থেকে অনুপ্রাণিত৷ অনেকে এতে হিন্দু ধর্মের সঙ্গে বেশি মিল খুঁজে পান৷ অনেকের ধারণা আসলে হিন্দু এবং মুসলিম ধর্মের মিশ্রণে উৎপত্তি হয়েছে শিখ ধর্মের। ইসলামে ‘আল্লাহ’ হলেন মহান সৃষ্টিকর্তা৷ শিখরা বলেন ‘এক’ হলো ‘সত্য’৷ গুরুর মাধ্যমে এই সত্যকে পাওয়া সম্ভব৷

 

ইসলাম ও শিখ ধর্ম উভয়েই মূর্তিপূজা সমর্থন করে না৷ ইসলামের দৃষ্টিতে এটি ‘শিরক’ ও ‘হারাম’ অর্থাৎ অমার্জনীয় অপরাধ৷ শিখ ধর্মে মূর্তি পূজাকে নিরর্থক বলা হয়েছে৷ দুই ধর্মেই মদ ও অন্য নেশাদ্রব্য গ্রহণ করা নিষিদ্ধ৷ শিখরা এর কারণ হিসেবে শরীরের পবিত্রতার কথা বলেন৷ এছাড়াও অনেক ধর্মে যেমন পুরোহিতরা জাগতিক বিষয় থেকে দূরে থাকেন৷ তারা পরিবারের বা সামাজিক বন্ধনে আবদ্ধ হন না৷ কিন্তু ইসলাম ও শিখ উভয় ধর্মে এই সুযোগ আছে৷ ইমাম বা গুরুরা বিয়ে করতে পারেন, পারিবারিক জীবন চালাতে পারেন৷ এছাড়া দুই ধর্মই জাতপ্রথাকে অস্বীকার করে৷

আরও পড়ুন
উল্কাপাতে ডাইনোসরেরা বিলুপ্ত হলেও তার প্রভাব থেকে বাঁচতে সক্ষম হয়েছিল হাঙরেরা, জানা গেল গবেষণায়

আফগানিস্তানে শিখদের অবস্থান সমস্যা আর নেমে আসা নানা আক্রমণ- ফিরে দেখা ইতিহাস

 

তবে দুই ধর্মে কিছু বিষয় একেবারেই আলাদা। যেমন, শিখ ধর্ম পুনর্জন্মে বিশ্বাস করে৷ কিন্তু ইসলাম ধর্ম করে না৷ এছাড়া মৃতের সৎকারের বিষয়টি তো আছেই৷ কিন্তু অনেক বিশ্লেষকই মনে করেন, এই দুই ধর্মের অমিলের চেয়ে মিলই বেশি৷ ইসলাম ধর্ম বিষয়ক পন্ডিত আবদুল জলিল বলেন, ‘‘শিখ ধর্মের ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায়, এর প্রবর্তক হিন্দু পরিবারে জন্মগ্রহণ করলেও মুসলিমদের সঙ্গে তাদের প্রার্থনায় শরীক হয়েছেন, প্রকাশ্যেই তাদের আচার পালন করেছেন,” ‘বার্থ অফ সিখিজম’ নামের একটি লেখায় উল্লেখ করেন তিনি৷

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Stay Connected

7,808FansLike
20FollowersFollow

Latest Articles

error: Content is protected !!