১৯০১ সালে স্কটল্যাণ্ড ইয়ার্ডে প্রতিষ্ঠিত হয় ফিঙ্গারপ্রিন্ট ব্যুরো ,কিন্তু তারও আগে ১৮৯৭ সালের জুন মাসে বিশ্বের প্রথম সরকারি ফিঙ্গারপ্রিন্ট ব্যুরো প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এই কলকাতায়।স্যার এডওয়ার্ড রিচার্ড হেনরি ,খান বাহাদুর আজিজুল হক এবং রায়বাহাদুর হেমচন্দ্র বোস এই তিনজনের চেষ্টায় স্থাপিত হয়েছিল এই প্রতিষ্ঠান যা আজও কাজ করে সেন্ট্রাল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন বা সি বি আই -এর তত্ত্বাবধানে।
যেকোন অপরাধের কিনারা করতে আজও পুলিশের অন্যতম অস্ত্র ফরেন্সিক বিভাগ।আর এই ফরেন্সিক সায়েন্সের অন্যতম প্রধান অস্ত্র হল অপরাধীর আঙুলের ছাপ।শুধুই কী অপরাধী নির্ণয়!আজকের জীবন-যাত্রায় আধার কার্ড থেকে শুরু করে বায়োমেট্রিক পদ্ধতি সবকিছুতেই প্রয়োজনীয় আঙ্গুলের ছাপ।

অপরাধীর আঙুলের ছাপ থেকে যে তাকে ধরা সম্ভব এই চিন্তা স্যার এডওয়ার্ডের মাথায় আসে ১৮৯২ সালে প্রকাশিত পরিসংখ্যানবিদ স্যার ফ্রান্সিস গ্যাল্টনের ‘ফিঙ্গার প্রিন্টস’ বইটি পড়ে। এই বইতে ছিল আঙ্গুলের ছাপ দিয়ে পরিচয় শনাক্তকরণের বিষয়ে বিশদে আলোচনা ।স্যার এডওয়ার্ড ছিলেন বেঙ্গল পুইশের তৎকালীন আই . জি বা ইন্সপেক্টর জেনারেল।সে সময়ে আঙ্গুলের ছাপের বিকল্প হিসেবে প্রচলিত ছিল অ্যানথ্রোপোমেট্রি।স্যার ফ্রান্সিস গ্যাল্টনের সঙ্গে তার নিয়মিত চিঠি-বিনিময় হত আঙ্গুলের ছাপ দিয়ে পরিচয় শনাক্তকরণের বিষয়ে।
আরও পড়ুন
বিজয়ীর মেডেল হিসাবে মানুষের মাথা উপহার দিত এই আদিবাসী গোষ্ঠী

সালটা ১৮৯২। আঙুলের ছাপ থেকে অপরাধী নির্ণয় কিভাবে সম্ভব তাই নিয়ে চিন্তিত স্যার এডওয়ার্ড। এজন্য তার প্রয়োজন ছিল কিছু পারদর্শী গনিতবিদের। প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে বেছে নিলেন দরিদ্র কিন্তু অমিত-প্রতিভাশালী ছাত্র আজিজুল-কে।তাকে দিলেন পুলিশ বিভাগে সাব -ইস্পেক্টরের চাকরি।একই সালে পুলিশ বিভাগে সাব-ইন্সপেক্টর হিসাবে যোগ দিলেন হেমচন্দ্র বসু। স্যার এডওয়ার্ড এই দুই তরুণকে খুলে বললেন তার চিন্তা-ভাবনা।দায়িত্ব দিলেন নতুন এক পদ্ধতি উদ্ভাবনের।যার মাধ্যমে অনেক সহজে অপরাধী সনাক্তকরণ সম্ভব হবে।নতুন দায়িত্ব পেয়ে কাজে লেগে পড়লেন এই দুই উদ্যমী যুবক।
আজিজুল তৈরি করলেন পদ্ধতিটির মূল গাণিতিক ভিত্তি। তিনি একটি গাণিতিক ফর্মুলা আবিষ্কার করলেন। এই ফর্মুলা অনুযায়ী তিনি আঙুলের ছাপের ধরনের ওপর ভিত্তি করে বানালেন ৩২টি সারি আর সেই ৩২টি সারিতে সৃষ্টি করলেন এক হাজার ২৪টি খোপ। তার এই পদ্ধতিতে আঙ্গুলের ছাপ সংখ্যায়
অসংখ্য হলেও শ্রেণীবিন্যাস করার কাজ সহজ হয়ে যায়। আর হেমচন্দ্র আবিষ্কার করলেন আঙ্গুলের ছাপের টেলিগ্রাফিক কোড সিস্টেম।। ১৮৯৭ সালে বেঙ্গল পুলিশের বিশেষ একটি কমিশন পরীক্ষা নিল এই পদ্ধতির। ফলাফলে দেখা গেল ,অ্যানথ্রোপমেট্রির থেকে তুলনায় অনেক নির্ভুল ফলাফল দিচ্ছে এই নতুন পদ্ধতি।তৈরি হয় ‘হেনরি ক্লাসিফিকেশন সিস্টেম’ যেটি নামাঙ্কিত হয়েছিল স্যার এডওয়ার্ড হেনরির নামে এবং আজও যা সারা বিশ্বে অপরাধ বিজ্ঞানীদের কাছে সমাদৃত।
আরও পড়ুন
মাত্র ৫০০০ টাকায় তৈরি হয়েছিল কলকাতার চিড়িয়াখানা, উদ্বোধন করেছিলেন স্বয়ং ইংল্যাণ্ডের রাজা
আরও পড়ুন
ভারতের এই আশ্চর্য মন্দিরে শূন্যে ভেসে থাকে পাথরের থাম
‘হেনরি ক্লাসিফিকেশন সিস্টেম’ সূত্রপাত ঘটায় এক বিতর্কেরও। স্যার এডওয়ার্ড হেনরি ছিলেন এই পদ্ধতিটির তত্ত্বাবধায়ক।কিন্তু মূল কাজ করেছিলেন আজিজুল এবং হেমচন্দ্র ।অথচ নামকরণ হয় হেনরি-র নামে।কিন্তু এই বিষয়ে আজিজুল বা হেমচন্দ্র-র বক্তব্য কখনও জানা যায়নি। ব্রিটিশ সরকারের থেকে আজিজুল তার অবদানের জন্য ‘খান সাহেব’ এবং হেমচন্দ্র ‘রায় বাহাদুর ‘ উপাধি পান।পরবর্তী কালে ব্রিটিশ সরকার থেকে বিশেষ একটি পুরস্কার প্রচলিত হয় তাদের সম্মানে।পুরস্কারটির নাম – ‘হক অ্যান্ড বোস অ্যাওয়ার্ড’।