আমেরিকার রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে জয়ী জো বাইডেনকে শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে পাশে থাকার আশ্বাস দিলেন নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আর্ডান। করোনা সংক্রমণ মোকাবিলায় নিউজিল্যান্ড মডেল গোটা বিশ্বে সমাদর লাভ করেছে। অনেক দেশই এই বিষয়ে নিউজিল্যান্ড প্রশাসনের সাহায্য ও পরামর্শ নিচ্ছে।
পৃথিবীব্যাপী করোনার সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়লে মার্চ মাসের শেষের দিকে কড়া লকডাউন ঘোষণা করে নিউজিল্যান্ড সরকার। তারপর থেকে ব্যাপক মাত্রায় করোনা পরীক্ষা, কন্টাক্ট ট্রেসিং ও আইসোলেশন; এই নীতির ওপর নির্ভর করে করোনাকে প্রায় কোণঠাসা করে দিতে সক্ষম হয়েছে তারা। প্রায় ৫০ লক্ষ জনসংখ্যার নিউজিল্যান্ডে এখনও পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছে ২০৩১ জন। যদিও সরকারি হিসেবে সেই সংখ্যা আরও কম, মাত্র ১৬৭৪। মৃতের সংখ্যা মাত্র ২৫। সেখানে এই মুহূর্তে করোনা আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীনের সংখ্যা মাত্র ৪৩ জন।
নিউজিল্যান্ড প্রশাসনের এই ব্যাপক সাফল্যের কারণ লুকিয়ে আছে করোনা পরীক্ষার সংখ্যার মধ্যে, এমনই ধারণা বিশেষজ্ঞদের। ইতিমধ্যেই ১২ লক্ষ ৭৮ হাজারেরও বেশি মানুষের করোনা পরীক্ষা হয়ে গিয়েছে। গোটা বিশ্বে করোনার তৃতীয় পর্যায়ের সংক্রমণ শুরু হওয়ার পরই সর্দি ও জ্বরে ভোগা সবাইকে করোনা পরীক্ষার কড়া নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্যদপ্তর। সেইসঙ্গে নিউজিল্যান্ড স্বাস্থ্যদপ্তরের তৈরি অ্যাপের মাধ্যমে সম্ভাব্য আক্রান্ত রোগীরা কাদের সংস্পর্শে এসে ছিল সেই গোটা ব্যাপারটাই চিহ্নিত করা সম্ভব হয়েছে। এর ফলে আক্রান্তদের সংস্পর্শে আসা সমস্ত মানুষকেই আইসোলেশনে যেতে বাধ্য করে নিউজিল্যান্ড প্রশাসন, যা এই মহামারীর গতিকে রুখে দিতে পেরেছে।

নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আর্ডান জানিয়েছেন তাদের অবস্থানগত কিছু প্রাকৃতিক সুবিধার কারণে এই মহামারী নিয়ন্ত্রণে সুবিধা হয়েছে। সেটা বিশ্বের অনেক দেশেই সম্ভব না হলেও অভিজ্ঞতা এবং তথ্য দিয়ে নিউজিল্যান্ড পাশে দাঁড়াতে প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন তিনি।
করোনা মোকাবিলায় অন্যতম সফল দুই দেশ হলো ভিয়েতনাম ও দক্ষিণ কোরিয়া। ১০ কোটি জনসংখ্যার ভিয়েতনামে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা যথাক্রমে ১৩১২ এবং ৩৫। ভিয়েতনামের পক্ষ থেকে সরকারিভাবে জানানো হয়েছে সীমান্ত সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে দিয়ে এবং সন্দেহ হলেই আইসোলেশনে পাঠিয়ে তারা এই মহামারীর মোকাবিলায় সফল হয়েছে।
দীর্ঘ কড়া লকডাউনের পর বর্তমানে ভিয়েতনাম সরকার কেবলমাত্র ব্যাবসায়িক উদ্দেশ্যে বিমান পরিবহনের অনুমতি দিয়েছে। সেইসঙ্গে অন্য দেশ থেকে কেবলমাত্র কূটনৈতিক, অতি দক্ষ কর্মচারী ও বিনিয়োগের উদ্দেশ্যে আসা ব্যক্তিরা ছাড়া আর কাউকেই নিজেদের দেশে এখনো পর্যন্ত প্রবেশ করার অনুমতি দিচ্ছে না ভিয়েতনাম প্রশাসন। সেইসঙ্গে লকডাউন ঘোষণার ফলে যে সমস্ত বিদেশী পর্যটক তাদের দেশে আটকে পড়েছিল তাদের জন্য ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত বিনামূল্যে থাকা ও খাওয়ার বন্দোবস্ত করেছে ভিয়েতনাম প্রশাসন। ভিয়েতনাম প্রশাসনের তরফ থেকে জানানো হয়েছে তাদের দেশে যাতে নতুন করে করোনার সংক্রমণ ছড়িয়ে না পড়ে তার জন্য এই কড়াকড়ি আরো বেশ কিছুদিন চালিয়ে যাওয়া হবে।

অন্যদিকে ৫ কোটি জনসংখ্যার দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রথম দিকে ব্যাপক হারে মানুষজন করোনা আক্রান্ত হতে শুরু করে। ঠিক সেই সময়েই দক্ষিণ কোরিয়া প্রশাসন দেশজুড়ে কড়া লকডাউন ঘোষণা করে এবং বিপুল হারে করোনা পরীক্ষা করার সিদ্ধান্ত নেয়। এখনও পর্যন্ত দক্ষিণ কোরিয়ায় ২৯ লক্ষেরও বেশি মানুষের করোনা পরীক্ষা করা সম্ভব হয়েছে। এর ফলে আক্রান্তদের সম্পূর্ণ আলাদা করে আইসোলেশনে রাখার মধ্যে দিয়ে সংক্রমণের গতিকে অনেকটাই রুখে দিতে পেরেছে এই দেশ। দক্ষিণ কোরিয়ায় এখনও পর্যন্ত মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৩১,৩৫৩। এই মারণ ভাইরাসের প্রভাবে মৃত্যু হয়েছে ৫১০ জনের।
শীতের মরসুম শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সার্স গোত্রীয় এই ভাইরাসের তৃতীয় ঢেউ বিশ্বের ওপর আছড়ে পড়েছে। যার প্রভাবে আমেরিকা, ভারত ছাড়াও স্পেন, ফ্রান্স, ইতালি, ইংল্যান্ডের মতো ইউরোপের দেশগুলোতে সংক্রমণ ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে। এই পরিস্থিতিতে নিউজিল্যান্ড, ভিয়েতনাম ও দক্ষিণ কোরিয়া গোটা বিশ্বের কাছে উদাহরণ হয়ে দেখা দিচ্ছে। প্রমাণ হয়ে গিয়েছে প্রশাসন ও সাধারণ মানুষ উভয়ে যদি সদিচ্ছা থাকে তাহলে এই মারণ ভাইরাসকে রুখে দেওয়া সম্ভব।