ধরুন আপনাকে বলা হলো একটি ছোট্ট কুকুর ছানা এক বিশাল গন্ডারকে গিলে খেলে ফেলেছে, কিংবা একটা রুই মাছ আস্ত কুমীর গিলে খাচ্ছে, তাহলে নিশ্চিতভাবেই আপনার মনে হবে আমি সুকুমার রায়ের আবোলতাবোল কবিতার কথা বলছি, নইলে আমার মাথাটা আমার সম্পূর্ণ খারাপ হয়ে গিয়েছে। আপনার এমন ভাবনা অমূলক নয়। কিন্তু সত্যিই সত্যিই এক কুকুর ছানা গিলে খেয়েছে একটি আস্ত বিশালাকৃতির লোমশ গন্ডার।এক বর্ণ গল্প নয় বরং এটা বাস্তব সত্যি। এবং এই বাস্তব সামনে আসার পর আপনার মতোই বিজ্ঞানীরাও চমকে গিয়েছেন। তাদের সামনে উঠে এসেছে এক অদ্ভুত তথ্য, এক কুকুর ছানার খাবারে পরিণত হওয়ার কারণে সম্পূর্ণ বিলুপ্তি ঘটেছে প্রাগৈতিহাসিক এক লোমশ প্রজাতির গন্ডারের। তাহলে একটু খুলেই বলা যাক ব্যাপারটা।
প্রাগৈতিহাসিক যুগ নিয়ে বহু বিজ্ঞানী ও ইতিহাসবিদের মধ্যেই বিভিন্নরকম কৌতূহল দেখা যায়। সেইসময়ের সম্পূর্ণ ঘটনা আমরা জানতে পারি না কোনো লিখিত প্রমাণের অভাবে। তবে বিভিন্ন প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন আমাদের সেইসময়ের জীবজগত বা মানুষের জীবনযাত্রা সম্পর্কে বুঝতে সাহায্য করে। নেকড়ের মতো ক্ষুধার্ত এই প্রবাদটি সম্ভবত প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকেই প্রচলিত হয়ে আসছে। তার কারণ খিদে পেলে নেকড়েরা তার আকৃতির চেয়ে অনেক বড়ো গন্ডারও উদরস্থ করতে পারে।
আরও পড়ুন
আমাজনের গভীরে আবিষ্কৃত নতুন রক শেল্টার, সন্ধান পাওয়া গেল আদি মানবের চিত্রকর্ম
এমনই একটি আশ্চর্য নিদর্শন রাশিয়ার বিজ্ঞানীরা পেয়েছেন গত ২০১১ সালে। দশ বছর ধরে একটি প্রাগৈতিহাসিক কুকুরছানা অথবা নেকড়ে জাতীয় প্রাণীর দেহাবশেষ নিয়ে গবেষণায় তারা একটি অদ্ভুত জিনিস আবিষ্কার করেছেন। প্রাণীটির দেহাবশেষ ও পাকস্থলী পরীক্ষা করে দেখা যায় এই প্রাণীটির খাবারের পরিমাণ একটি সিংহের খাবারের পরিমাণের সমান। প্রাণীটির ডিএনএ এর আরও উন্নততর গবেষণায় দেখা যায় যে শেষ খাবারটি ছিল একটি গণ্ডারের প্রজাতির মধ্যে একমাত্র বেঁচে থাকা একটি লোমশ গন্ডার। প্রাথমিকভাবে মনে করা হয়েছিল যে এটি হয়তো একটি সিংহের জীবাশ্ম। কিন্তু পরীক্ষা নিরীক্ষার পর দেখা যায় যে এটি একটি বিলুপ্ত প্রজাতির লোমশ গন্ডার।
বিজ্ঞানীরা অবাক হয়েছেন এই তথ্য পেয়ে যে কিভাবে ক্ষুধার্ত এই ক্যানাইন প্রজাতির জীবটি একটি অত বড়ো গন্ডারটিকে কামড়াতে সক্ষম হল। প্রায় ১২.৫ ফুটের ওই গন্ডারটির ওজন ছিল প্রায় ২ বা ৩ টন। ঐতিহাসিকরা মনে করেন যে এটি হয়তো একটি শিশু গন্ডার ছিল যেটি এই নেকড়ে শ্রেণীর প্রাণীটির মুখোমুখি হয়েছিল। অথবা এই শিশু গন্ডারটির মৃত্যুর পরেই তাকে উদরস্থ করে কুকুরছানাটি। তবে কুকুরটি ও গন্ডারটির মৃত্যুর সময়ের ব্যবধান খুব বেশি ছিল না। এর কারণ হিসাবে বিজ্ঞানীরা অনুমান করেন যে সম্ভবত অত বড় প্রাণীটি উদরস্থ করেও হজম করতে পারেনি ক্যানাইন প্রজাতির এই প্রাণীটি। সেই কারণেই তার মৃত্যু হয়। অথবা কোন বড়ো গন্ডার হয়তো প্রতিশোধের কারণে মেরে ফেলেছে এই কুকুর বা নেকড়েটিকে এমনটিও অনুমান করেন অনেকে।
আরও পড়ুন
বাহান্ন হাজার বছর আগে উল্কাপাতের ফলে তৈরি ভারতের এই লেক বিস্মিত করে নাসার বিজ্ঞানীদেরও
প্রত্নতাত্ত্বিকদের গবেষণায় এই দুটি নিদর্শনই অন্তত চোদ্দ হাজার বছরের পুরোনো। পাশাপাশি সেই সময়েই লোমশ গন্ডারের অস্তিত্ব বিলুপ্ত হয়। জিনের বিবর্তন নিয়ে গবেষণারত এক অধ্যাপক লাভ ড্যালেন বলেন যে, তাঁদের কাছে সমস্ত স্তন্যপায়ী প্রাণীর মাইটোকন্ড্রিয়াল ডিএনএ এর ডেটাবেস রয়েছে। সেগুলি মিলিয়েই এই সিদ্ধান্তে তারা উপনীত হয়েছেন। পাশাপাশি কুকুরছানাটির মৃত্যু লোমশ গন্ডারটির পরে হয়েছে এই তথ্যও দিয়েছেন গবেষকরা। সুতরাং বলাই যায় প্রাগৈতিহাসিক যুগের লোমশ গন্ডারের বিলুপ্তির কারণ ছিল নেকড়ে প্রজাতির একটি কুকুরছানা। এইভাবেই প্রাগৈতিহাসিক যুগে এমন অনেক বৈচিত্র্যময় ঘটনা ঘটেছে যা বর্তমানের প্রাণীজগতকে হয়তো বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করে থাকে। তবে তুষার যুগের বহু প্রজাতির খাদ্যাভ্যাস আজকের তুলনায় অনেক অন্যরকম ছিল তা এই নিদর্শনের দ্বারা আবারও প্রমাণিত হল।
Follow this thread for an almost unbelievable story, hiding in the SI of this paper:https://t.co/2wnZTGVwVg
Ten years ago, a roughly 14,000 year old frozen #dog or #wolf #puppy was found in Russia. It's been named Tumat.
Subsequently, an autopsy of Tumat was conducted (1/n). pic.twitter.com/FtV3SIZmjL
— Centre for Palaeogenetics (@CpgSthlm) August 17, 2020