গত ২৬ জানুয়ারি প্রকাশিত হয়েছিল দিল্লির কৃষক আন্দোলনের অন্যতম নেতা রামিন্দর সিং পাটিয়ালার সাক্ষাৎকারের প্রথম পর্ব। কীর্তি কিষাণ ইউনিয়নের এই অভিজ্ঞ সদস্য গত পর্বে তুলে ধরেছিলেন আন্দোলন গড়ে ওঠার নেপথ্যের কাহিনি, আন্দোলনের গতি-পর্যায়, পাঞ্জাবের সীমা অতিক্রম করে আন্দোলনের সর্বভারতীয় হয়ে ওঠার সূচনাপর্ব। ২৬ জানুয়ারি-উত্তর আন্দোলনের গতিপ্রকৃতি কিছুটা হলেও পাল্টেছে। সেদিনকার ঘটনাপ্রবাহ কিছু সময়ের জন্য হলেও ধাক্কা দিয়েছিল কৃষকদের মনোবলে। কিন্তু আবারও উঠে দাঁড়াচ্ছেন তাঁরা। এবার অনেক বেশি সংযত, অনেক বেশি সাবধানী। যে সামান্য অংশের কৃষকরা ভুল করে ফেলেছিলেন, নিজেদের সেই ভুল বুঝতে পেরেছেন তাঁরা। দ্বিতীয় পর্যায়ের সাক্ষাৎকারে সেসবই বলেছেন রামিন্দর। সঙ্গে তুলে ধরলেন এই আন্দোলনে বিপুল অংশে নারীদের অংশগ্রহণের স্বতঃস্ফূর্ততা, কৃষকদের কমিউন-ভাবনা, ধনী-দরিদ্রের মিলেমিশে যাওয়ার লিগ্যাসির কথাও। ভিন্নসময়-এর হয়ে ফোনের অপর প্রান্ত থেকে শুনলেন সোহম দাস।
- ‘পাঞ্জাবের কৃষকদের আন্দোলন’ ছাড়াও আরেকটি তত্ত্ব বারবার উঠে আসছিল যে, এই কৃষি আইনে ধনী কৃষকরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন, ছোট কৃষকরা অতটা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না। তাই এই আন্দোলন মূলত ধনী কৃষকদের দ্বারা চালিত, এমন একটা তত্ত্ব প্রচারের চেষ্টা চলে এসেছে প্রথম থেকেই। এটা কতটা সত্য?
দেখুন, এই আন্দোলনে নানা ধরনের কৃষকরা রয়েছেন। ধনী কৃষকদের জন্য যেসব সংগঠন কাজ করে, তারা তাদের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে কাজ করছে। আবার, ছোট ও প্রান্তিক কৃষকদের জন্য যারা কাজ করে, তারাও সেরকমভাবে কাজ করছে। এই তিন আইন প্রত্যেককেই প্রভাবিত করবে। স্টেকহোল্ডার যারা আছে, তাদেরও প্রভাবিত করবে। কাউকে কম, কাউকে বেশি। সকলেই এটা বুঝতে পেরেছে যে, ক্ষতি সকলেরই হবে। সেজন্য, দু’ধরনের দৃষ্টিভঙ্গির কৃষিজীবীরাই এখানে উপস্থিত রয়েছেন।
- এই আন্দোলনে আমরা প্রথম থেকেই বহু মহিলা, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা এবং শিশুদেরকেও অংশ নিতে দেখেছি, যেটা এই গণ-আন্দোলনের একটা বড়সড় দর্শন হিসেবে দেখা দিয়েছে। এই বিষয়টা নিয়ে যদি কিছু বলেন।
দেখুন, এই আন্দোলনে বড় সংখ্যায় সামিল হয়েছে বিভিন্ন কৃষক পরিবার। যখন অস্তিত্বের প্রশ্ন ওঠে, যখন মানুষ দ্যাখে, তার দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছে, আর পেছনোর কোনও জায়গা নেই, তখনই সে সোজা হয়ে উঠে দাঁড়ায়। আর এখানে পরিবারের পর পরিবার খাড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে। সকলেই বুঝেছেন, এই আইনগুলো যদি বলবৎ হয়, তাহলে নিজেদের অস্তিত্ব নিয়েই প্রশ্ন উঠে যাবে। গ্রামের একটা বড় অংশ বুঝতে পেরেছিল, তাদের নিজেদেরকে স্থানান্তরিত হতে হবে। মহিলা যোগদানের নিরিখে এই আন্দোলন সততই একটা নিদর্শন তৈরি করল। বহু কৃষক নেত্রী উঠে আসছেন। তাঁরা শিখছেন, তাঁরা নিজেদের বক্তব্য রাখছেন। মহিলারা চেষ্টা করছেন যতটা সম্ভব নিজেদেরকে এই আন্দোলনে সামিল করে নেওয়া যায়। বাচ্চারা আসছে, কিশোর-কিশোরীরাও যোগ দিচ্ছে। সিঙ্ঘু আর টিকরি সীমান্ত তো তীর্থস্থানে পরিণত হয়েছে। পাঞ্জাবের গ্রাম এবং শহর থেকে যাঁরা এখানে এসে থেকে গিয়েছেন, তাঁরা ফিরে গিয়ে, যাঁরা এখনও আসেননি, তাঁদের বলছেন, তোমরা যাচ্ছ না কেন?
- আপনি এইমাত্র বললেন, বহু কৃষকই পরিবার নিয়ে এখানে চলে এসেছেন। তাঁরা তো দীর্ঘদিন ধরে নিজেদের ঘরবাড়ি, ক্ষেতজমি, চাষাবাদ ছেড়ে এখানে থাকছেন। কিন্তু তাতে আমাদের খাদ্যভাণ্ডারে কোনও ঘাটতি পড়েনি। অর্থাৎ, কৃষিকাজ চালু রয়েছে। এটা কীভাবে সম্ভব হচ্ছে?
পাঞ্জাবের কৃষক সমাজের মধ্যেই একটা কমিউনিটি-ভাবনা আছে। যখনই কেউ ট্রলি নিয়ে বেরোয়, সে হয়তো এক সপ্তাহের জন্য থাকল, তারপর ফিরে গেল, অন্য কেউ এল, এরকম রোটেশন পদ্ধতিতে পুরো কাজটা সম্পাদিত হয়। যদি এমন কেউ থাকে যার চাষের কাজ শেষ হয়নি, তার অনুপস্থিতিতে গ্রামের অন্যান্যরা সেই বাকি থাকা কাজটা করে দেয়। তার ক্ষেতে নিয়মিত জল দেওয়া, সবই চলতে থাকে। আবার সে যখন ফিরে যায়, সেও ওই একই কাজ করে। তখন ট্রলির ভার নেয় অন্য কেউ। শুধুমাত্র ২৬ তারিখের জন্য অনেকে এসেছিলেন, তাঁরা সেদিনের পরই ফিরে গেছেন। কিন্তু মিডিয়া যেরকম বলছে, বহু মানুষ আন্দোলন ছেড়ে দিচ্ছে, এটাও একটা বড় মিথ্যাচার। এখানে যে কমিউন-ভাবনা রয়েছে মানুষের মধ্যে, তা দেখলেই বোঝা যাবে। মানুষ একে অপরের সঙ্গে মনের দিক থেকে কাছাকাছি চলে আসে। ২৬ জানুয়ারির পরদিনই একটা প্যান্ডেলে যখন শীর্ষ নেতৃত্ব বক্তব্য রাখতে যান, সেখানে অর্ধেকের বেশি মানুষ নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে কেঁদে ফেলেন। তাঁরা যেভাবে কাঁদছিলেন, তাতে তো এটা পরিষ্কার যে, তাঁরা নিজেদের ভুলটা বুঝতে পেরেই কাঁদছেন।
- এখন ওখানে পরিস্থিতি কীরকম?
২৬ জানুয়ারি যা ঘটেছে, তা পুরোপুরি ষড়যন্ত্র ছিল। লালকেল্লায় আমাদের যাওয়ার কোনও পরিকল্পনা ছিলই না। আমরা আমাদের নিজস্ব পথনির্দেশ ধরেই এগোচ্ছিলাম, তারপর যখন আমরা ওইসব হওয়ার পর শোভাযাত্রা বাতিল করি, মানুষ ফিরেও আসেন। ‘কিষাণ মজদুর সংঘর্ষ কমিটি’ তো প্রথম থেকেই আমাদের সঙ্গে পুরোপুরি ছিল না। আরও কিছু মানুষ এখানে রয়েছেন, যাঁরা কিছুটা মৌলবাদী চিন্তাধারা নিয়ে চলেন। যেমন ওই তথাকথিত সমাজকর্মী লাখা সিধানা, এছাড়া, দীপ সিধু, ডঃ সুকৃত উদুকে, এরা তো বলতে গেলে কেন্দ্রীয় শাসকদলেরই সহযোগী। অতএব, এটা পুরোটাই একটা বৃহত্তর ষড়যন্ত্র। ২৬ জানুয়ারি তো খুবই কড়া নিরাপত্তা থাকে দিল্লি জুড়ে। কিন্তু সিঙ্ঘু সীমান্ত, যেটা কিনা আন্দোলনের অন্যতম কেন্দ্রস্থল, সেখান দিয়ে তো লোকজন দিব্যি বেরিয়ে যেতে পেরেছেন, কোনও অসুবিধা হয়নি। আবার কৃষক সংগঠন এবং পুলিশ মিলে যে পথনির্দেশ ঠিক করেছিল, সেই পথে অনেক সময়েই পুলিশ যেতে দেয়নি, অন্য পথ দিয়ে ঘুরতে হয়েছে। ষড়যন্ত্র যে হয়েছে, এখান থেকেই তো তা পরিষ্কার।
আরও পড়ুন
কৃষিবিলের মধ্য দিয়ে এই মোদি সরকার দেশের পিডিএস বা রেশন ব্যবস্থাটিকে তুলে দেবার ফন্দি আটছে না তো ?
লালকেল্লায় ধর্মীয় পতাকা তোলা হয়েছে। সেটাকে দেখানো হচ্ছে এইভাবে যে, এটা একটা বিশেষ সম্প্রদায়ের আন্দোলন, এটা দেশকে বিভক্ত করে দিতে পারে। এইভাবে একটা ভ্রম তৈরি করা হচ্ছে। সর্বভারতীয় স্তরে আমাদের এই আন্দোলনটা যেমন মানুষের সহানুভূতি পাচ্ছিল, মানুষ এসে যোগদান করছিলেন, সেই জায়গাটা থেকে সরে যাওয়ার একটা আশঙ্কা রয়েছে। কিছু সুবিধাবাদী এসে আন্দোলনটাকে মানুষের থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিতে চাইছে। ‘সংযুক্ত কিষাণ মোর্চা’ (এসকেএম) ইতিমধ্যেই তাদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে। তারা ঘোষণা করেছে যে, লালকেল্লায় সেদিন যারা এই কাজটি করেছে, তাদের সঙ্গে মোর্চার কোনও সম্পর্ক নেই। এই ষড়যন্ত্রের পিছনে বিজেপি দলের সহযোগিতা রয়েছে।
ধর্ণা চলছে আমাদের। গত এক-দেড় দিন ধরে মানুষ একটু মুষড়ে ছিলেন। আমাদেরও বদনাম হচ্ছিল। এমন কথাও উঠছিল যে, হরিয়ানার হিন্দু এবং পাঞ্জাবের শিখ সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করা হচ্ছে। তবে এখন ধীরে ধীরে মানুষ বুঝতে পারছেন যে, এখানে বড়সড় চক্রান্তের আভাস রয়েছে। কারণ, লালকেল্লায় পুলিশ ছিল। লোকে গিয়ে ধর্মীয় পতাকা লাগিয়ে আবার দশ মিনিটের মধ্যে বেরিয়েও গেল। তার মানে এটা অনেকটাই বোঝা যাচ্ছে যে, এরা শাসকদলেরই লোক ছিল। সরকার তো এখন কিষাণ মোর্চার নেতাদের উপরেই এফআইআর দায়ের করেছে। যেখানে কম লোকজন ধর্ণা দিয়েছে, সেখানে গিয়ে জোরজুলুম চলছে। তাদের বলা হচ্ছে উঠে যেতে। তবে যারা যারা এই ষড়যন্ত্রটা করল, তাদেরকে আমাদের লোকজন চিনে ফেলেছেন, তাদের ‘গদ্দার’ বলা হচ্ছে। এই বিশ্বাসঘাতকদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধাচারণ করার একটা পরিবেশ তৈরি হচ্ছে। পাঞ্জাবেও তাদের বিরুদ্ধে একটা জনমত গড়ে তোলার চেষ্টা করা হচ্ছে। কিছু কিছু সংবাদপত্রের সম্পাদকীয় কলামে তাদের বিরুদ্ধে লেখা হয়েছে। ধীরে ধীরে মানুষ বুঝতে পারবেন কীভাবে এই ষড়যন্ত্র হয়েছে, এবং আন্দোলনের বদনাম করার জন্য কেন্দ্রীয় শাসকদলের ভূমিকা কতখানি। এর ফলাফল কী হতে পারে, মানুষ সেটা বুঝতে পারছেন।
আরও পড়ুন
লালকেল্লা বন্ধ রাখার বিজ্ঞপ্তি জারি আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার
কঠিন সময় তো অবশ্যই। দেখুন, আন্দোলনের ক্ষেত্রে তো ওরকম সোজা পথ বলে কিছু হয় না। আঁকাবাঁকা পথেই আন্দোলন এগোয়। বিজেপির পুরনো ইতিহাসই তেমন যে তারা সবসময়েই এমন আন্দোলনের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে। এই ষড়যন্ত্রের পরিকল্পনা অনেক আগে থেকেই হয়েছিল, যেটা আমরা এখন বুঝতে পারছি। তারপর সেই পরিকল্পনা তারা ২৬ তারিখে বাস্তবায়িত করেছিল। তবে, কৃষকরা কিন্তু মোটামুটি শান্তই ছিলেন। কিছু মানুষ অশান্ত হয়েছিলেন ঠিকই, কিন্তু সেই সংখ্যাটা কমই ছিল। লালকেল্লায় যারা গিয়েছিল, সেটা তাদের নিজেদের পরিকল্পনার অংশ। সেই সংখ্যাও কম ছিল। বাকিরা এখানেই ছিলেন।
মানুষ বুঝতে পারছেন, আমরাই এই আন্দোলন শুরু করেছি, আমরাই একে এতদূর নিয়ে এসেছি, এবার আমাদের নিজেদের জন্য যদি এই আন্দোলনের বদনাম হয়, তবে সেই ক্ষতি পূরণের চেষ্টা আমাদেরই করতে হবে। গতকাল যখন এসকেএমের নেতৃবৃন্দ নিজেদের কথা বলা শুরু করলেন, তখন আস্তে আস্তে কিন্তু দিব্যি ভিড় হয়ে গেল। আজ সিঙ্ঘু বর্ডারে টানা ১৫-২০ কিলোমিটার রাস্তা জুড়ে আবার একটা ট্র্যাক্টর শোভাযাত্রা বেরিয়েছিল। বিভিন্ন কৃষক সংগঠন নিজেদের পতাকা নিয়ে সেখানে যোগ দেয়। চেষ্টা আমরা চালিয়ে যাচ্ছি। অনেকেই হতোদ্যম এবং সন্দিহান হয়ে পড়েছেন ঠিকই, তবে কারা ভুল করেছে, সেটা মানুষ আস্তে আস্তে বুঝতে পারছেন। আন্দোলন চলবে নিজের মতোই। সামনের তিন-চারদিন আমাদের জন্য ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে। আশা আছে, আমরা খুব তাড়াতাড়ি নিজেদের পথে ফিরতে পারব।
আরও পড়ুন
গাজীপুরের কৃষক আন্দোলন স্থলে উত্তেজনা, রাতের মধ্যে এলাকা খালি করার নির্দেশ দিল্লি পুলিশের
- আন্দোলন থেকে বহু কৃষক মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন বলে যে প্রচার সামনে আসছে, এটা কতখানি সত্য?
২৬ জানুয়ারির ঘটনার পরে মানুষের মনে একটু ভয় রয়েছে। তাঁরা ভাবতে শুরু করেছেন, বড় ভুল হয়ে গেল, ফায়ারিং হতে পারে। তার উপর মেনস্ট্রিম মিডিয়া যেভাবে আন্দোলন-বিরোধী ন্যারেটিভ খাড়া করেছে, আতঙ্কে কিছু কিছু মানুষ ফিরে গেছেন। তবে আন্দোলনে মানুষ কমে যাচ্ছে, এটাও পুরোপুরি সত্য নয়। আবারও বলছি, আন্দোলন নিজের মতোই চলবে। মানুষ একটু একটু করে বুঝছেন যে, এগোতে হলে সেদিনের ঘটনা থেকে শিক্ষা নিতে হবে। এই আন্দোলনের যে মতাদর্শ, সেই মতাদর্শের ফলেই আন্দোলনের কিছু সীমাবদ্ধতাও আছে। সেটা মানুষ শিখে যাবেন।
২৭ জানুয়ারির সভায় তাঁরা তো নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে কেঁদে ফেললেন। অর্থাৎ, তাঁরা বুঝতে পেরেছেন, তাঁরা ভুল পথে চালিত হয়েছিলেন, কিন্তু এখন তাঁদের নেতাদের সঙ্গেই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতে হবে। অতএব, বিশ্বাসের জায়গাটা কিন্তু টাল খায়নি। প্রথম থেকেই একটা ন্যারেটিভ তৈরি করার চেষ্টা চলছিল যে, এই আন্দোলন বড়লোক চাষীদের আন্দোলন, এই আন্দোলন নেতৃত্বহীন। এই ন্যারেটিভের দ্বারা যাঁরা বিভ্রান্ত হয়েছিলেন, তাঁরা নিশ্চয় সেই ভুল বুঝতে পারবেন। তাঁরা তো আমাদেরই লোক। যারা ষড়যন্ত্র করেছিল, তাদেরকে তো দূরে রাখতেই হবে, কিন্তু যাঁরা ভুল করে ফেলেছেন, তাঁদের হাত ছাড়লে চলবে না। মিডিয়া যেরকম দেখাচ্ছে, বেশিরভাগ লোক নাকি সেদিন লালকেল্লায় ঢুকে পড়েছিল, এটা একেবারেই ঠিক নয়। সামান্য সংখ্যক লোকই গিয়েছিল, তারা বিভ্রান্ত হয়েই চলে গিয়েছিল।
- ২৬ জানুয়ারির দু-তিনদিন আগেই একটা বড়সড় ষড়যন্ত্র ফাঁস হয়ে গিয়েছিল, যেখানে হিংসা ছড়াতে আসা কিছু লোককে গ্রেপ্তার করা হয়। ২৬ জানুয়ারির ঘটনাও আপনার মতে, একটা বড়সড় ষড়যন্ত্রের অংশ। আপনার কি মনে হয়, এবার আপনাদের আরও একটু বেশি সতর্ক হতে হবে?
দেখুন, সতর্ক কিন্তু আমরা প্রথম থেকেই ছিলাম। সেজন্যেই প্রথম থেকে আমাদের চেষ্টা ছিল, যাতে এই আন্দোলন পুরোপুরি শান্তিপূর্ণ থাকে। এখন সত্যিই আরও সতর্ক হতে হবে। যদি সত্যিই শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের ন্যারেটিভ তৈরি না হত, তাহলে তো ওদিন যে লাখ লাখ লোক রাস্তায় নেমেছিল, তারা সকলেই লালকেল্লায় চলে যেত। কিন্তু সেখানে পাঁচ থেকে দশ হাজারের বেশি মানুষ তো যায়নি। টিভি রিপোর্টে তো সেরকমই দেখা গেছে। আর ওখানে অন্যান্য রাজ্যেরও অনেক মানুষ ছিলেন। উত্তরাখণ্ডের মানুষ ছিলেন। উত্তরাখণ্ড বিজেপি-শাসিত রাজ্য। সেখান থেকে কীভাবে তাঁদের এখানে আসতে দিল?
একজন কৃষক তো শহিদও হয়েছিলেন। শেল এসে লেগেছিল, ওদের ট্রাক্টারটাও উল্টে যায়। ওখানে মানুষ তখন বুঝতেই পারেননি যে, এটা একটা ষড়যন্ত্রের ব্যাপার। হরিয়ানার কৃষকরাও ছিলেন, পাঞ্জাবেরও কিছু কৃষক ছিলেন। একথা একেবারেই বলব না যে আমাদের রাজ্যের কৃষকরা ছিলেন না। লাখ লাখ লোকের মধ্যে মাত্র দশ হাজার লোক ওখানে গেল, এই প্রশ্ন যুবসমাজের মধ্যে ঠিকই উঠবে। তারা শিখেও যাবে, বুঝেও যাবে যে, কেউ এই আন্দোলনকে কালিমালিপ্ত করতে চেয়েছিল। তারা শিখবেই। সে বিশ্বাস আমাদের আছে। আমাদের চেষ্টা জারি থাকবে। সেজন্যেই ২৬ তারিখের পর থেকে এই বিষয়ে আমাদের দফায় দফায় আলোচনা চলছে। মানুষ বুঝবে। একটু সময় লাগবে। কিন্তু যদি আন্দোলন আবার পূর্ণ মাত্রা পেয়ে যায়, তবে যারা এই ষড়যন্ত্র করল, তাদের পর্দা ফাঁস হয়ে যাবে।