২৬ অক্টোবর, ২০২১মঙ্গলবার

২৬ অক্টোবর, ২০২১মঙ্গলবার

অজানা ক্লিওপেট্রা, মিশরীয় নন বরং গ্রীক বংশোদ্ভূত ছিলেন এই বিদূষী ফারাও

 

শ্রেষ্ঠ সুন্দরী, নীলনয়না সুন্দরী ইত্যাদি নানা নামে ইতিহাস এবং সাহিত্য তাকে অভিহিত করেছে। শেক্সপিয়ার থেকে জর্জ বার্ণার্ড শ, কে তাকে নিয়ে লেখেননি! মিশরের বিখ্যাত রানী ক্লিওপেট্রা তার সৌন্দর্য ,তার প্রেম, তার মৃত্যু সমস্ত কিছুতেই ছিলেন আলাদা। ক্লিওপেট্রা সপ্তম থিয়া ফিলোফেটর ছিলেন মিশরের শেষ ফারাও। গ্রীক শব্দ kleos এবং pater থেকেই ক্লিওপেট্রা নামের উৎপত্তি, যার অর্থ ‘গ্লোরি অফ দ্য ফাদার’। খ্রিস্টপূর্ব ৬৯-এ তিনি জন্মগ্রহণ করেন এবং খ্রিস্টপূর্ব ৩০-এ ৩৯ বছর বয়সে তিনি মারা যান। 

ক্লিওপেট্রা মিশরে জন্মগ্রহণ করলেও তার পরিবারের পূর্বপুরুষ গ্রীসের ম্যাসিডোনিয়ার প্রথম টলেমি যিনি রাজা আলেকজাণ্ডারের দ্য প্রধান সেনাপতিদের একজন ছিলেন। টলেমি ৩২৩ খ্রিস্টপূর্বাব্দে আলেকজান্ডারের মৃত্যুর পরে মিশরের রাজত্ব গ্রহণ করেন এবং তারপর প্রায় তিনশো বছর ধরে মিশরে গ্রীকভাষী রাজবংশ শাসন করত।জাতিগতভাবে মিশরীয় না হয়েও ক্লিওপেট্রা মিশরের অনেক প্রাচীন রীতিনীতি গ্রহণ করেছিলেন এবং টলেমি বংশে তিনিই প্রথম যিনি মিশরীয় ভাষা জানতেন।

 

 

 

আরও পড়ুন

আজও গভীর সমুদ্রে এক জাহাজ ভর্তি মৃতদেহ বয়ে বেড়ায় ভৌতিক ‘অক্টাভিয়াস’ পণ্যতরী

 

রোমান প্রচারে ক্লিওপেট্রাকে এমন এক বিতর্কিত চরিত্র হিসাবে চিত্রিত করা হয়েছিল, যিনি তার যৌন আবেদনকে রাজনৈতিক অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করেছিলেন। অথচ তিনি তার সৌন্দর্যের চেয়ে বুদ্ধির জন্য বেশি খ্যাতিমান হতে পারেন। তিনি প্রায় ১২টি ভাষা জানতেন, সেই সঙ্গে গণিত, দর্শন এবং জ্যোতির্বিদ্যায় পারদর্শী ছিলেন। মিশরীয় ইতিহাস অনুযায়ী তিনি এমন এক শাসক, যিনি পণ্ডিতদের সঙ্গ উপভোগ করতেন এবং তাদের রাজসভায় স্থান দিয়েছিলেন।

 

মিশরের ‘টেম্পল অফ হাথর’ -এর দেয়ালে ক্লিওপেট্রার মূর্তি

 

ক্লিওপেট্রা ৪৬ খ্রিস্টপূর্বাব্দে রোমে যান এবং তার উপস্থিতি বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল বলে মনে করা হয়। ক্লিওপেট্রা গোপন রাখেননি যে তিনিই সিজারের উপপত্নী। এমনকি ক্লিওপেট্রা, তার ও সিজারের সন্তান সিজারিয়ানকে নিয়ে শহরে এসেছিলেন। সিজার ভেনাস জেনেট্রিক্সের মন্দিরে ক্লিওপেট্রার একটি স্বর্ণর্মূর্তি স্থাপন করলে অনেক রোমান অভিজাত বিরক্ত হন। ৪৪ খ্রিস্টপূর্বাব্দে রোমান সেনেট হলে সিজারকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করার পরে ক্লিওপেট্রা রোম থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন। কিন্তু ততদিনে রোম তার নতুন ধরনের সাজ-সজ্জায় মোহিত হয়েছিল। তার অন্যরকম হেয়ারস্টাইল এবং মুক্তোর গহনাগুলি ফ্যাশন ট্রেন্ডে পরিণত হয়েছিল এবং রোমান মহিলারা তার অনুকরণ শুরু করেছিলেন।

 

আরও পড়ুন

নেটিভদের বেঙ্গল ক্লাবে ঢুকতে না দেওয়ার প্রতিবাদে তৈরি হয়েছিল এখনকার বনেদী ক্যালকাটা ক্লাব

 

৪১ খ্রিস্টপূর্বাব্দে রোমান জেনারেল মার্ক অ্যান্টনির সঙ্গে ক্লিওপেট্রা তাঁর কিংবদন্তি প্রেমের সম্পর্ক শুরু করেন। তাদের সম্পর্কের একটি রাজনৈতিক অবস্থান ছিল। ক্লিওপেট্রার অ্যান্টনিকে প্রয়োজন ছিল তার মুকুট এবং মিশরের স্বাধীনতা রক্ষার জন্য, অপরদিকে অ্যান্টনির প্রয়োজন ছিল মিশরের ধন-সম্পদ। তবে তারা একে অপরের সঙ্গও উপভোগ করতেন। প্রাচীন একটি সূত্রে জানা যায়, তারা ৪১-৪০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের শীতকালীন সময় মিশরে অসম্ভব বিলাসের মধ্যে ছুটি কাটিয়েছিলেন, এমনকি তারা তাদের নিজস্ব পানীয় ক্লাব তৈরি করেন। অ্যান্টনি এবং ক্লিওপেট্রার অন্যতম প্রিয় সখ ছিল, আলেকজান্দ্রিয়ার রাস্তায়  ছদ্মবেশে ঘুরে বেড়ানো এবং মজা করা।

 

ক্লিওপেট্রা এবং মার্ক অ্যান্টনি

 

বলা হয়, অক্টাভিয়ার বাহিনী তাদের ধাওয়া করলে ৩০ খিস্টপূর্বাব্দে ক্লিওপেট্রা এবং অ্যান্টনি আত্মহত্যা করেন। অ্যান্টনি নিজের পেটে মারাত্মকভাবে ছুরিকাঘাত করেন বলে জানা গেছে।কিন্তু ক্লিওপেট্রার আত্মহত্যার পদ্ধতিটি এখনও অনিশ্চিত। জনশ্রুতি অনুযায়ী তিনি সম্ভবত একটি মিশরীয় গোখরো সাপের ছোবলে মারা গিয়েছিলেন। তবে প্রাচীন ঐতিহাসিক প্লুটার্কের মতে, “কি ঘটেছিল তা কেউই জানেনা।” তিনি আরও বলেছিলেন, “ক্লিওপেট্রা তার চিরুনির মধ্যে একটি মারাত্মক বিষ লুকিয়ে রাখতেন।“

 

আরও পড়ুন

‘পেশাদার ঘুম-ভাঙানিয়া’ মেরি অ্যান স্মিথ, মানুষের ঘুম ভাঙানোই ছিল যার পেশা

 

ইতিহাসবিদ স্ট্রাবো অনুমান করেন যে ক্লিওপেট্রা কোন মারাত্মক মলম ব্যবহার করেছিলেন। এই বিষয়টি মাথায় রেখেই এখন অনেক পণ্ডিত সন্দেহ করেন – ক্লিওপেট্রা সাপের বিষের মতো কোনো মারাত্মক বিষ পিনের ডগায় লাগিয়ে নিজে গ্রহণ করেছিলেন।কিন্তু সত্যিটা আজও অজানা থেকে গেছে।

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Stay Connected

7,808FansLike
19FollowersFollow

Latest Articles

error: Content is protected !!