ঈদুজ্জোহায় ত্যাগ স্বীকারের নামে নিরীহ পশু হত্যার প্রতিবাদ জানিয়ে তিনদিনের অনশন শুরু করেছেন কলকাতার আলতাফ হুসেন। পশুপ্রেমী এই যুবক জানিয়েছেন ধর্মীয় রিতীর নাম করে পশুদের সঙ্গে অজস্র অন্যায় করা হয়। তাই সাধারণ মানুষকে সচেতন করতেই তিনি এই অনশন করছেন। গত মঙ্গলবার থেকে এই অনশন শুরু করেছেন তিনি।
৩৩ বছর বয়সী আলতাব হুসেন অতীতে আর পাঁচজনের মত গরু বা মুরগীর মাংস খেতেন। কিন্তু ২০১৪ সালের একটি ভিডিও তার গোটা জীবনের গতিপথ পরিবর্তন করে দেয়। ওই ভিডিওয় তিনি দেখেছিলেন কিভাবে একটি ডেয়ারি ফার্মে গরুদের উপর অমানবিক অত্যাচার করা হচ্ছে। তিনি জানিয়েছেন বিভিন্ন ডেয়ারি ফার্ম লাভের জন্য নানান কৌশল নিয়ে থাকে। কখনও অতিরিক্ত দুধ উৎপাদনের জন্য গরুকে ইনজেকশন দেয়, আবার কখনও গরুর সদ্যোজাত সন্তান অর্থাৎ বাছুরকে দুধ না খেতে দিয়ে তার মায়ের কাছ থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়। এরপরই তিনি সিদ্ধান্ত নেন প্রাণীজ কোনও কিছু খাবেন না। ভেগান হয়ে ওঠা আলতাফ জানিয়েছেন ধীরে ধীরে বেশিরভাগ মানুষ যদি এইভাবে প্রাণীজ খাবার পরিত্যাগ করে তবে ডেয়ারি ফার্মগুলো এই নৃশংসতার পথ থেকে সরে আসতে বাধ্য হবে।
আরও পড়ুন
সোনায় মোড়ানো ফেরারি গাড়ির কি অর্থের অপচয়ের নিদর্শন?
২০১৪ সালেই ভেগান হয়ে ওঠেন আলতাব হুসেন। এরপর থেকে তিনি মাংস তো দূর অস্ত, দুধ পর্যন্ত খান না। এমনকি চামড়ার কোনও জিনিস অর্থাৎ জুতো, বেল্ট পর্যন্ত ব্যবহার করেন না। সেই থেকেই ধর্মের নামে প্রাণী হত্যার বিরোধিতা করে আসছেন তিনি। কিন্তু তিন বছর আগে নিজের বাড়িতেই এক অভূতপূর্ব পরিস্থিতির সম্মুখীন হন কলকাতার এই যুবক। সেবার ঈদুজ্জোহা উপলক্ষ্যে তার দাদা বাড়িতে একটি পশু নিয়ে এসেছিল কুরবানী দেওয়ার জন্য। কিন্তু আলতাব প্রবল প্রতিবাদ করে এই পশু হত্যা আটকাতে কোনরকমের সফল হন। কিন্তু তার এই আচরন মোটেও সমর্থন করেননি পরিবারের সদস্যরা। তারা আলতাবের এই ভেগান হয়ে ওঠায় অত্যন্ত বিরক্ত।
ঘটনাচক্রে শুধু মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষ নয়, হিন্দুরা পর্যন্ত নানান সময় আলতাফ হুসেনকে প্রাণে মারার হুমকি দিয়েছে। কারণ তিনি কালী পুজো উপলক্ষে পশু বলির তীব্র বিরোধিতা করেন। তবে নাখোদা মসজিদের ইমাম শফিক কোয়াসমী ঈদুজ্জোহার পশু হত্যার বিরোধিতা করায় আলতাব হুসেনের নামে ফতোয়া জারি করেছেন। তিনি পরিষ্কার জানিয়েছেন এই ধরনের আচরণ করার জন্য কলকাতার ওই যুবককে সর্বসমক্ষে ক্ষমা চাইতে হবে। এই বিষয়টিকে তিনি ধর্মবিরোধী আচরণ হিসেবে চিহ্নিত করেন। যদিও এই সমস্ত ফতোয়ায় একটুও ভয় পাননি আলতাব। তিনি পরিষ্কার জানিয়েছেন ধর্মের নামে নিরীহ প্রাণীদের হত্যার বিরোধিতা তিনি চালিয়ে যাবেন।