ভয়াবহ ছবি উঠে এলো বীরভূম জেলার রামপুরহাট মহকুমা হাসপাতালে। অক্সিজেনের অভাবে একজন করোনা আক্রান্ত মধ্যবয়স্ক পুরুষ রোগী হাতজোড় করে অক্সিজেন চাইতে চাইতে শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে সকলের চোখের সামনে মারা গেলেন। শেষ মুহূর্তেও ওই ব্যক্তি হাসপাতালের বিছানায় হেলান দিয়ে এমনভাবে বসে ছিলেন যে দেখলে মনে হবে তিনি জীবিত, শুধু বিশ্রাম নিচ্ছেন। এই মর্মান্তিক ঘটনার পর ওই হাসপাতালে ভর্তি অন্যান্য করোনা আক্রান্ত রোগীদের পরিজনরা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙ্গুল তুলেছে। তাদের দাবি চিকিৎসক, নার্স, ওয়ার্ডবয়রা যথেষ্ট আন্তরিক হলেও রামপুরহাট হাসপাতালের প্রশাসকরা অক্সিজেন সঙ্কটের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন না।
কলকাতা শহরে অক্সিজেনের যেরকম হাহাকার শুরু হয়েছে তা দেখে চিকিৎসকরা আগেই জানিয়েছিলেন জেলাগুলিতে অবস্থা আরও কঠিন হতে পারে। কার্যক্ষেত্রে রামপুরহাট মহকুমা হাসপাতাল দেখিয়ে দিল জেলাগুলিতে অক্সিজেনের সঙ্কট ঠিক কতটা তীব্র। এই হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে রোগীর পরিজনদের অবাধ প্রবেশের অনুমতি দেওয়া আছে। তারা যখন তখন রোগীদের কাছে গিয়ে বসছেন, সবকিছু দেখভাল করছেন। অভিযোগ উঠেছে হাসপাতালে অক্সিজেন না পেয়ে রোগীর পরিজনরা বাইরে থেকে নিজেদের পকেটের পয়সা খরচ করে অক্সিজেন সিলিন্ডার কিনে নিয়ে আসতে বাধ্য হচ্ছেন। তাদের অভিযোগ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ খালি অক্সিজেন সিলিন্ডারগুলি ভর্তি করার কোনও উদ্যোগ দেখাচ্ছে না।
আরও পড়ুন
হাইকোর্টের স্পষ্ট নির্দেশ গণনার দিন নির্বাচন কমিশনের নিষেধাজ্ঞা বলবৎ করার দায়িত্ব আধিকারিকদের
রামপুরহাটের এই মর্মান্তিক ঘটনাটি সম্ভবত বাংলায় হাসপাতালে ভর্তি থাকাকালীন অক্সিজেন না পেয়ে মৃত্যুর প্রথম ঘটনা। যদিও অক্সিজেন উৎপাদনে স্বয়ম্ভর পশ্চিমবঙ্গে এরকম ঘটনা ঘটার কথা নয়। বিশেষজ্ঞরা বারবার জানাচ্ছেন এরাজ্যে অক্সিজেনের যে সঙ্কট তৈরি হয়েছে তা অনেকটা কৃত্রিম। তারা এই কারণে সাধারণ মানুষের আতঙ্ক এবং কালোবাজারি কারবারিদের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলছেন। কিন্তু এই পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য প্রশাসন দ্রুত যদি ব্যবস্থা না নেয় তা হলে গোটা পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে।
রামপুরহাট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে এরকম অভিযোগও উঠেছে রোগীদের শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা সত্তরের ঘরে নেমে গেলেও সেখানে অক্সিজেন প্রদানের কোনও বন্দোবস্ত করা হচ্ছে না। ওই জেলারই বোলপুর মহকুমা হাসপাতালেও একইরকমভাবে অক্সিজেন সঙ্কটের অভিযোগ উঠেছে।