২৬ এপ্রিল, ২০২৪শুক্রবার

২৬ এপ্রিল, ২০২৪শুক্রবার

কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি এই ইংরেজ তন্ত্রসাধকের হাত ধরেই ইউরোপের সঙ্গে পরিচয় ঘটেছিল ভারতীয় তন্ত্রের

ইংরেজরা একসময় এই দেশের মানুষকে নেটিভ হিসেবে চিহ্নিত করেছিল। কিন্তু পরবর্তীকালে এক ইংরেজ আইনজ্ঞ ভারতীয় সংস্কৃতির প্রেমে পড়ে একজন তন্ত্রসাধক হয়ে ওঠেন। এমনকি তিনি একের পর এক উল্লেখযোগ্য তন্ত্রশাস্ত্র ইংরেজিতে অনুবাদ করে গিয়েছেন। তার অনুবাদ করা গ্রন্থগুলি পড়েই তৎকালীন ইউরোপের আরও অসংখ্য মানুষ ভারতীয় তন্ত্রের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিলেন।

 

জন জর্জ উড্রফ শুধুমাত্র একজন আইনজ্ঞ নয়, তিনি কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি ছিলেন ১৮৬৫ সালের ১৫ ডিসেম্বর কলকাতায় জন্মগ্রহণ করা এই ইংরেজদের সঙ্গে জাতীয় কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠাতা অ্যালান অক্টোভিয়ান হিউমের রক্তের সম্পর্ক ছিল। তার মা ফ্লোরেন্স হিউম ছিলেন অ্যালান অক্টোভিয়ান হিউমের আপন ভাইঝি।

আরও পড়ুন
ইঞ্জিনে চড়ে মোদির স্মৃতিবিজড়িত রেল স্টেশন সফরে নতুন রেলমন্ত্রী, পড়তে হল রোষের মুখে

কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি এই ইংরেজ তন্ত্রসাধকের হাত ধরেই ইউরোপের সঙ্গে পরিচয় ঘটেছিল ভারতীয় তন্ত্রের

১৮৭৮ সালে ভাইয়ের সঙ্গে ইংল্যান্ডে যান জন জর্জ উড্রফ। সেখানে বছর দশেক পড়াশোনা করেন তিনি। ১৮৮৮ সালে আইন নিয়ে তিনি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হন। এর পরের বছর অর্থাৎ ১৮৮৯ সালে তিনি কলকাতায় ফিরে এসে বাবা তথা কলকাতা হাইকোর্টের বিখ্যাত ব্যারিস্টার জেমস টিসডাল উড্রফের আইন ব্যবসায়ে যোগ দেন।

 

১৯৯৭ সালে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ফেলো হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯০২ সালে তাকে ভারতের ব্রিটিশ সরকার নিজেদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আইনজীবী হিসেবে নির্বাচিত করে। ১৯০৪ সালে তিনি কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি হন এবং ১৯১৫ সালে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির সম্মান পান।

আরও পড়ুন
বিয়ের পিঁড়িতে বসেও ল্যাপটপ নিয়ে অফিসের কাজ করছে বর! নিউ নর্ম্যাল বিয়েতে মাতল নেট দুনিয়া

কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি এই ইংরেজ তন্ত্রসাধকের হাত ধরেই ইউরোপের সঙ্গে পরিচয় ঘটেছিল ভারতীয় তন্ত্রের

 

১৯০২ সালে জন জর্জ উড্রফ বিবাহ করেন। তার স্ত্রী এলেন এলিজাবেথ গ্রিমসন একজন পিয়ানোবাদক ছিলেন। সেই সঙ্গে তিনি থিয়োসফির চর্চা করতেন। স্ত্রীর প্রভাবেই ভারতীয় সংস্কৃতির একনিষ্ঠ অনুরাগী হয়ে ওঠেন এই ইংরেজ বিচারপতি। ইতিমধ্যেই তার সঙ্গে কলকাতা হাইকোর্টের সংস্কৃত পণ্ডিত হরিদেব শাস্ত্রীর সখ্যতা তৈরি হয়। তার সূত্রেই পরিচয় ঘটে তৎকালীন সময়ের ভারত বিখ্যাত তন্ত্রসাধক শিবচন্দ্র বিদ্যার্ণবের সঙ্গে।

আরও পড়ুন
গ্যাস লাইটারকে পিস্তল ভেবে গুলি চালাল মার্কিন পুলিশ

কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি এই ইংরেজ তন্ত্রসাধকের হাত ধরেই ইউরোপের সঙ্গে পরিচয় ঘটেছিল ভারতীয় তন্ত্রের

১৯০৬ সালে বারাণসি ঘুরতে গিয়ে শিবচন্দ্র বিদ্যার্ণবের আশ্রমে ওঠেন জন জর্জ উড্রফ। সেখানেই তিনি তন্ত্র সাধনার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে ওঠেন। ওই সময়ই তাকে তন্ত্র মতে দীক্ষা দিয়েছিলেন শিবচন্দ্র বিদ্যার্ণব। পরবর্তীকালে বন্ধু হরিদেব শাস্ত্রীর সঙ্গে গোটা ভারত ঘুরে বেরিয়ে বিখ্যাত তন্ত্রসাধকদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এই ইংরেজ বিচারপতি। এতে ভারতীয় তন্ত্রের প্রতি তার আকর্ষণ আরও কয়েকগুণ বেড়ে যায়। পরবর্তীকালে তিনি সস্ত্রীক তন্ত্র মতে দীক্ষা নেন। একসময় জয়কালী দেবী নামে এক ভৈরবীর কাছেও বেশ কিছুদিন তন্ত্র সাধনা করেছিলেন তিনি।

 

১৯১৫ সালে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি হওয়ার পাশাপাশি নাইট উপাধি লাভ করেন জন জর্জ উড্রফ। এরপর থেকে তিনি ‘স্যার’ খেতাবে ভূষিত হন। এদিকে ১৯১৩ সাল থেকে আর্থার অ্যাভালন ছদ্মনামে তন্ত্র সাধনার একের পর এক বই ইংরেজিতে অনুবাদ করতে শুরু করেন তিনি। এই বইগুলির মাধ্যমেই ইউরোপীয়দের ভারতীয় তন্ত্রের সঙ্গে পরিচয় ঘটে।

আরও পড়ুন
দেশে ফিরতে না চেয়ে অলিম্পিকের শিবির থেকে উধাও উগান্ডার ভারত্তোলক

কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি এই ইংরেজ তন্ত্রসাধকের হাত ধরেই ইউরোপের সঙ্গে পরিচয় ঘটেছিল ভারতীয় তন্ত্রের

১৯২২ সালে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির পদ থেকে অবসর নিয়ে তিনি ইংল্যান্ডে ফিরে যান। সেখানে ১৯২৩ থেকে ১৯৩০ সাল পর্যন্ত অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে আইনের অধ্যাপক ছিলেন। পরবর্তীকালে তিনি ফ্রান্সে চলে যান। ১৯৩৬ সালের ১৬ জানুয়ারি ফ্রান্সে প্রয়াত হন এই ইংরেজ তন্ত্রসাধক।

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Stay Connected

7,808FansLike
20FollowersFollow

Latest Articles

error: Content is protected !!