২৬ এপ্রিল, ২০২৪শুক্রবার

২৬ এপ্রিল, ২০২৪শুক্রবার

ত্রয়োদশ শতকের দেবী মূর্তি ঘরে নিয়ে এনে বিপদগ্রস্থ এই পরিবার

বাড়িতে এক দেবী মূর্তি নিয়ে আসার পর থেকে ঘটছে নানান দুর্ঘটনা। পরিবারের বিশ্বাস ওই দেবীমুর্তির সঠিকভাবে পুজো হচ্ছে না তাই এইসব দুর্ঘটনার সম্মুখীন হতে হচ্ছে পরিবারকে। যেমন বিবেচনা তেমন কাজ। এরপরই সুপ্রাচীন ওই দেবীমূর্তি সরকারের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠেছে পূর্ব বর্ধমান জেলার দাঁইহাটের ঘোষ পরিবার। তাদের বাড়িতে হঠাৎ করে খুঁজে পাওয়া যে দেবী মূর্তি আছে তা আসলে অষ্টভূজাপিতা মারিচী দেবীর মূর্তি। জানা গিয়েছে এটি তেরোশো খ্রিস্টাব্দের আগে নির্মিত। ঐতিহাসিকরা জানিয়েছেন পাল যুগে বাংলায় যখন বৌদ্ধ ধর্মের রমরমা ছিল তখন তন্ত্র সাধনায় শক্তির আরেক রূপ হিসেবে অষ্টভূজাপিতা মারিচী দেবীর পুজো করা হত। এটি সম্ভবত সেই সময়ের মূর্তি বলে ঐতিহাসিকদের অনুমান।

 

গত ২৫ মার্চ নিজেদেরই একটি পুকুর খনন করার সময় মাটির তলায় এক শিলা মুর্তি খুঁজে পায় দাঁইহাটের ঘোষ পরিবার। যথারীতি তারা এই সাড়ে চার ফুট উচ্চতার মূর্তিটিকে নিজেদের বাড়িতে নিয়ে যায়। নিয়মমতো তাকে পুজোর বেদীতে রেখে প্রতিনিয়ত পূজা করেন তারা। অন্যান্য ঠাকুর দেবতার মত এই শিলা মুর্তিটিকেও প্রতিদিন জল-বাতাসা দেওয়া হত পরিবারের পক্ষ থেকে। কিন্তু ওই পরিবারের বন্দনা ঘোষের দাবি মূর্তিটি বাড়িতে আসার পর থেকেই একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটছে। ওই মূর্তিটি আনার তিন দিনের মধ্যে হঠাৎ করেই গুরুতর অসুস্থ হয়ে তাদের চারটি মোষ মারা যায়। এর দিন দশেকের মধ্যে তাদের পরিবারেরই ছেলে বাসুদেব ঘোষ চাল মেরামত করার সময় আচমকাই পড়ে যান। তার আঘাত বেশ গুরুতর। তিনি এখনও শয্যাশায়ী।

আরও পড়ুন
বাংলা চলচ্চিত্রের অপূরণীয় ক্ষতি, ঘুমের মধ্যেই চলে গেলেন পরিচালক বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত

দিন তিনেক আগে ওই ঘোষ বাড়িতে আচমকাই বজ্রপাত হয়। তার তীব্র আওয়াজে পরিবারের এক শিশুর কানের শ্রবণশক্তি চলে গিয়েছে। পরিবারের অনুমান যেহেতু অষ্টভূজাপিতা মারিচী দেবীর সঠিক নিয়ম মেনে পুজো করা সম্ভব হচ্ছে না তাই তিনি ক্রুব্ধ হয়ে এই সমস্ত ঘটনা ঘটাচ্ছেন! কিন্তু তিন দিন আগে রাজ্যে বাজ পড়ে ২৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। ওইদিন দক্ষিণবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকায় মুড়ি-মুড়কির মতো বাজ পড়ে। শুধু তাই নয় গত কয়েকদিন ধরেই আবহাওয়াজনিত কারণে রাজ্যের সর্বত্র বজ্রাঘাতের পরিমাণ অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে।

 

বিশেষজ্ঞদের মতে ওই গ্রামীণ পরিবারটি নানারকম জনশ্রুতির বশবর্তী হয়ে কুসংস্কার গ্রস্থ হয়ে পড়েছে। কিন্তু সঠিকভাবে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে গোটা বিষয়টি কুসংস্কার। বজ্রপাত পুরোটাই পরিবেশগত কারণে এই সময় বেশি হচ্ছে সর্বোত্র। আর হঠাৎ করে মোষ মারা যাওয়া বা চাল ঠিক করতে গিয়ে পড়ে গিয়ে একজনের আহত হওয়ার ঘটনা অত্যন্ত স্বাভাবিক। তবে বিজ্ঞান মনস্ক মানুষের পাশাপাশি কাটোয়া বিধানসভার বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় পর্যন্ত এই বিরল মূর্তিটি সরকারি হেফাজতে রাখার পক্ষেই মত প্রদান করেছেন। তাদের বক্তব্য এরকম একটি দুর্লভ মূর্তি কারোর বাড়িতে না রেখে সরকারের হেফাজতের রাখলে গবেষণার মাধ্যমে আরও অনেক তথ্য জানা যেতে পারে।

আরও পড়ুন
৮ মাসের গর্ভবতী হওয়া সত্ত্বেও করোনা হাসপাতালে দায়িত্ব পালন করছেন কাশ্মীরের এই মহিলা চিকিৎসক

কাটোয়ার বিধায়ক চেষ্টা চালাচ্ছেন যাতে কাটোয়া মহকুমা গ্রন্থাগারে এই মূর্তিটি রাখা সম্ভব হয়। উল্লেখ্য অষ্টভূজাপিতা মারিচী দেবীর মূর্তিটি অন্যান্য প্রচলিত দেবীমুর্তির থেকে অন্যরকম। এই দেবীমুর্তির তিনটি মুখ আছে। প্রতিটি মুখে তিনটি করে চোখ। তার এক পাশের মুখ ক্রুদ্ধ ভঙ্গির, অন্যপাশের বরাহ আকৃতির। আর যে মুখটি সোজাসোজি আছে তা শান্ত। জনশ্রুতি অনুযায়ী এই দেবী মূর্তি তন্ত্রসাধকদের অত্যন্ত প্রিয়। তাই তার পুজো কোন‌ও সাধারণ মানুষ করতে পারে না। তবে এরকম একটি দুষ্প্রাপ্য মূর্তি উদ্ধার ইতিহাসের অনেক নতুন দিক উন্মোচন করতে পারে।

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Stay Connected

7,808FansLike
20FollowersFollow

Latest Articles

error: Content is protected !!